একাদশ সংখ্যা চতুর্থ ই- সংস্করণ ডিসেম্বর ২০২০

ভাণ পত্রিকা

একাদশ সংখ্যা চতুর্থ ই- সংস্করণ ডিসেম্বর ২০২০ ​

সম্পাদক :

সম্পাদনা সহযোগী :

প্রচ্ছদ :

সুচেতনা ঘোষ

নক্সা পরিকল্পক :

অন্যান্য কাজে :

ভাণ-এর পক্ষে:

ও মৌলিকা সাজোয়াল

কর্তৃক

৮৬, সুবোধ গার্ডেন, বাঁশদ্রোণী, কলকাতা : ৭০০০৭০ থেকে প্রকাশিত। যোগাযোগ : ৯৬৪৭৪৭৯২৫৬

( হোয়াটসঅ্যাপ ) ৮৩৩৫০৩১৯৩৪ ( কথা / হোয়াটসঅ্যাপ )

৮৭৭৭৪২৪৯২৮ ( কথা ) [email protected] ( ই – মেল ) ​

Reg. No : S/2L/28241

সূচি

সম্পাদকের কথা

১. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কেন ‘বিশেষ’ বোঝালেন – উৎসব মুখার্জি

২ ” দুই প্রজন্মের স্মৃতিতে প্রদীপ ঘোষ” গাঁথলেন – ঋতুরাজ প্রামাণিক

৩. অভিনেতার জন্য “দেখা আরো দেখা” এর প্রস্তাব রাখলেন – ময়ূরী মিত্র

৪. “গায়কী অঙ্গ” এর তত্ত্ব তালাশ করলেন – অরিত্র দে

৫. ” বন্দিশ ব্যান্ডিটস্” দশ পর্বের ওয়েব সিরিজ নিয়ে – অজন্তা সিনহা

৬.’লিভিং থিয়েটার’ নিয়ে আলাপচারিতায় স্বয়ং – প্রবীর গুহ

৭. ধারাবাহিক চর্চার অভিজ্ঞতা থেকে গড়ে উঠবে নতুন থিয়েটার’ বললেন – কিশোর সেনগুপ্ত

৮. বিকল্প থিয়েটার চর্চার অভিজ্ঞতা শোনালেন – বিশ্বজিৎ রায়

৯. রঙ্গের নানা মঞ্চ নিয়ে মন্তব্য করলেন – অভি চক্রবর্তী

সম্পাদকের কথা

খোদ কোলকাতার বুকে টিকে থাকা সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হল গুলি সাহস করে খুলেও দর্শকাভাবে বন্ধ হয়ে গেল। দু চারটি দল অল্প রিহার্সাল আর স্বল্প শো চালাতে চাইছে – কিন্তু দেখবে কে? হলে গিয়ে সরাসরি গানের উত্তাপ, নাচের জ্যান্ত বিভঙ্গ, কিংবা প্রর্দশনী তে প্রিয় শিল্পীর সৃষ্টি কে চেখে দেখার আনন্দ যেন কেবলি সুখ-স্মৃতি। উৎসব গুলো ছন্নছাড়া। মুখোশের পেছনের আতঙ্ক-আর্তনাদ কে লুকোনো যাচ্ছে কই? ঈদ মোবারক হয়ে বিজয়ার শুভেচ্ছা তে তেমন কিছু বদলালো না। খাচ্ছি শুচ্ছি কাজে যাচ্ছি বটে,তবু যেন কিছুই করছি না। সময়টা কেমন এলিয়ে পড়েছে। কাত হয়ে আছে। ঝুলে আছে যেন। কবে যে সে রাজপথে বুক চিতিয়ে হেঁটে যাবে আবার। আমরা দিন গুনি। গুণতে গুণতে দুই হাতের আঙুলের রেখা ফুরিয়ে আসছে। একটু অসহায় লাগছে বটে। এরই মাঝে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ধরা ধামের পাততাড়ি গুটিয়ে নিলেন। বয়েস হয়েছিল বটে। তবু কোভিড না হলে, আরো কয়েক বছর থাকতেন হয়তো। মন কাঁদে। সৌমিত্ররাতো আর মাঝেমধ্যে জন্মান না। কখনো- সখনো। এমনিতে বাঙালির যা দুরবস্থা। খেউড় খিস্তি আর বাঙলা মদে ভেসে যাচ্ছে বঙ্গ দেশ। পুঁজির বাজার উস্কানি দিয়ে সংস্কৃতিকে খেলাচ্ছে, গেলাচ্ছে একেবারে শ্রাদ্ধ করে ছাড়ছে। চূড়ান্ত অসুস্থতা কে উৎসব বানিয়ে তোলা গেছে। তখন এই মাপের একজন বিশ্ব নাগরিক বাঙালি ব্যক্তিত্ব সঙ্গে থাকলে জাতির একটা ভরসা থাকে। অসুস্থ হলেও বাবা কে যেমন বাঁচিয়ে রাখতে চায় পরিবার। তেমনি আরকি! ওদিকে হঠাৎ করে সাত সকালে ঘুটঘুটে অন্ধকার নিয়ে এলো একটা মেসেজের আলো। বাঙলা থিয়েটারের সম্ভাবনাময় মেধাবী বিনয়ী পরিশ্রমী এবং উজ্জ্বল চোখ- মনের প্রসেনজিৎ, প্রসেনজিৎ বর্ধন, বলে কয়েই হঠাৎ… ৩৭ এ পড়েছিল ও। কোনো মানে হয়? কিছু ভালো লাগে? সৌমিত্র কে নিয়ে একটা ছোট্ট শ্রদ্ধা-গদ্য লিখে দিয়েছেন উৎসব মুখার্জি। কিছু দিন আগে চলে যাওয়া বর্ষিয়ান সর্বজন শ্রদ্ধেয় বাচিক শিল্পীকে নিয়ে একালের বাচিক শিল্পীদের অঞ্জলির মালা গাঁথলেন ঋতুরাজ। অনুভবী গদ্যে ময়ূরী মিত্র দেখালেন অভিনয় কে দেখা আর দেখা কে অভিনয়ে নিয়ে আসার রহস্য-রোমাঞ্চ। অরিত্র সিরিয়াস মেজাজে গায়কী অঙ্গ এর সন্ধানে দেশ- কাল, জাতি- ধর্ম, ইতিহাস- ভূগোল কে একাকার করে এক অজানা সুর লাগালো তার রম্য গদ্যে। প্রথম পর্ব এটি। কথা আছে বেশ কয়েকটি পর্ব পেরিয়ে ইতি টানা হবে। “বন্দিশ ব্যান্ডিটস ” দশ পর্বের ওয়েব সিরিজ কে দেখে আমাদের দেখালেন অজন্তা সিনহা। সঙ্গীতের প্রাচীন- নবীন দ্বন্দ্ব শিল্পীর রাগ- অনুরাগে কী তান তুলতে পারে, তাঁর লেখায় সে খোঁজ মিলবে। বিষয় বিশেষ” রঙ্গের নানা মঞ্চ এ এবারে থাকলো লিভিং থিয়েটার নিয়ে প্রবীর গুহর মূল্যবান সাক্ষাৎকার। কল্যানী নাট্যচর্চার কিশোর সেনগুপ্তের একটি চমৎকার ভাবনা-গদ্য। রইলো এ সময়ের দুই থিয়েটার-পাগল অভি চক্রবর্তী এবং বিশ্বজিৎ রায়ের মন্তব্য ও অভিজ্ঞতা। এখন তো প্রতিমাসে ভাণ পত্রিকা। মাসের শুরুতেই শিল্পানুরাগী বন্ধু স্বজন দের হাতে বাজারের ছাঁট নয়, অল্প হলেও টাটকা বাতাস তুলে দেওয়া যাচ্ছে; এই কঠিন সময়ে এই পরম প্রাপ্তি ভাণ পরিবারের।…

সৌমিত্র-যাপন

উৎসব মুখার্জী

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

এই গ্রহে বাঙালী নামক জাতির অস্তিত্ব যতদিন থাকবে; বাঙালী যেসব উপাদানের মধ্যে তার আত্মপরিচয় খুঁজবে তার মধ্যে অন্যতম বাঙালীর দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার প্রবণতা। জাতিগত ভাবে এমন ‘দ্বৈতবাদে’ বিশ্বাসী বোধহয় পৃথিবীতে বেশ বিরল। ঘটি-বাঙাল, ইলিশ-চিংড়ি, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, হেমন্ত-মান্না, সিপিএম-কংগ্রেস, আনন্দবাজার-যুগান্তর ছাপিয়ে বাঙালীর বিভাজনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান মুদ্রা হয়ে ওঠে ‘উত্তম-সৌমিত্র’। উত্তমের অতিনাটকীয়, বহির্মুখী, মেলোড্রামা আর সৌমিত্রর সংযমী, অন্তর্মুখী, রিয়ালিসমের টানাপোড়েনই যেন আত্মবিস্মৃত বাঙালীর আত্মপরিচয়ের শকুন্তলার আংটি; সেই আংটি যা দেখে দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনেছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে উত্তম পৌঁছে যান বাঙালীর হেঁশেলে আর সৌমিত্র আলো করে থাকেন বৈঠকখানা। দুজনার দুটি পথ বারেবারে দুটি দিকে বেঁকে গেলেও রয়ে যায় এক অবিচ্ছেদ্য বৈপরীত্য… এ যেন এক স্বর্গীয় বিরূদ্ধাচরণ।

 

আমার পিতৃদেব যখন পঞ্চাশের দশকের সদ্য কলেজ পড়ুয়া হিসেবে কফিহাউসে, চাপ-দাড়ি ও উসকো-খুসকো চুলের এক তরুণকে আবিষ্কার করেন আর আমি যখন আশির দশকের মাঝামাঝি রবিবারের মর্নিং শোতে প্রথম সোনার কেল্লা দেখি… বস্তুত আমি অবাক বিষ্ময়ে উপলব্ধি করি যে এর মাঝেই ঘটে গেছে এক দুর্দান্ত উত্থান, আমার অগোচরেই…

 
 
 
 
 
 
 
 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে ছিলেন? মঞ্চ-পর্দার দুরন্ত অভিনেতা? সত্যজিৎ রায়ের মার্সেলো মাস্ত্রোয়ানি? কবি? নাট্যকার? আবৃত্তিকার? পত্রিকা সম্পাদক? বাগ্মী? প্রেমিক? স্বামী? পিতা? বামপন্থী? সব প্রশ্নের আপাত উত্তরঃ হ্যাঁ; এবং অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে। তবে আমরা একটু মনযোগী হলে উপলব্ধি করতে পারি যে প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র পরিচয়ের সীমানা ছাপিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হয়ে ওঠেন বাঙালীর এক অমোঘ আখ্যান। অপুর সংসার থেকে বরুনবাবুর বন্ধু- প্রায় ছয় দশকের পথচলায় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে তিনি জড়ো করে চলেন অসংখ্য নুড়িপাথর যা ক্রমশ গড়ে তোলে বাঙালীর এক অত্যাশ্চর্য সমান্তরাল উপকথা। উত্তমকুমারের থেকে বাঙালীর পাওনা অপরিসীম, তবু রয়ে গেছিল এক অপূর্ণতা… সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ সহযোগে ও ব্যাতীত ভাবেই, সেই না পাওয়ার আক্ষেপ পূরণ করে দিলেন- তাঁর অনায়াস উপস্থিতিতে… বাঙালী তার আইকনের মধ্যে পেল এক সাংস্কৃতিক কৌলীন্য ও আভিজাত্য। আবার উত্তমকুমার যদি বাঙালীর ধ্রুবতারা হন তাহলে সৌমিত্র সেই নক্ষত্রযাপনের জীবন্ত বিনির্মান। অপু থেকে উমাপ্রসাদ, অমল থেকে অসীম, ফেলুদা থেকে সন্দীপ, উদয়ন পন্ডিত থেকে ক্ষিদ্দা, সীতাপতি থেকে দেবদাস, মাস্টারমশাই থেকে সুখেন্দু দত্ত এবং আরো অগণিত চরিত্রায়নে ও ব্যক্তিগত জীবনযাপনে সৌমিত্র বারে বারে প্রশ্ন করেন… মানুষকে, সমাজকে, ব্যবস্থাকে, মননকে, প্রতিষ্ঠানকে, আত্মাকে… ধীরে অথচ নিশ্চিতভাবে সৌমিত্র হয়ে ওঠেন, তারকার চিরাচরিত স্বর্গারোহনের প্রতিপ্রস্তাব।

 

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস’ নাটকের একদম শুরুতে অ্যান্টনিও বলেন- 𝖨𝗇 𝗌𝗈𝗈𝗍𝗁, 𝖨 𝗄𝗇𝗈𝗐 𝗇𝗈𝗍 𝗐𝗁𝗒 𝖨 𝖺𝗆 𝗌𝗈 𝗌𝖺𝖽’. কিসের এই 𝗌𝖺𝖽𝗇𝖾𝗌𝗌? এ কিসের দুঃখ? নাকি বিষণ্ণতা? এমনই এক ব্যাখাতীত বিষণ্ণতা কি আমরা বারবার খুঁজে পাইনা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত বিবিধ চরিত্রে? এ যেন আধুনিকতার ঠিক পরপারের বিষণ্ণতা… সৌমিত্র আলোকপ্রাপ্ত, যুক্তিনির্ভর, মেধাবী, বৌদ্ধিক- আক্ষরিক ভাবে রেনেশাঁ-মানব, প্রকৃত অর্থে আধুনিক। আর এখানেই যেন বিপত্তি… আধুনিকতার মানচিত্র নির্মানের প্রয়াস ও পদ্ধতির মধ্যেই অবধারিত ভাবেই রয়ে যায় এক অপূরণীয় ক্ষতির খতিয়ান। আধুনিকতার অগ্রগতি কখনই বিনামূল্যে আসে না, এ বড়ই মহার্ঘ্য। কি সেই মূল্য? মানুষের আধুনিকীকরণের ইতিহাস একার্থে তাই মানুষের ক্রমান্বয়ে হারানোর ইতিহাসও বটে… আর এখানেই লুকিয়ে থাকে সেই ব্যাখাতীত বিষণ্ণতা… এখানেই সৌমিত্র আলাদা, একা, প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু; ঠিক অপুরই মত। আমার মনে পড়ছে শাখা-প্রশাখার মেজ ছেলে প্রশান্তকে… সকল লোকের মাঝে বসে, আপন মুদ্রাদোষে কি ভাবে একাই আলাদা হয়ে উঠেছেন।

 

কি অদ্ভুৎ সমাপতন। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষের বছরেই, কোনও এক কার্তিক শেষের রবিবাসরীয় হিমেল সকালে এই শহর ছেড়ে, গ্রহ ছেড়ে, নশ্বর অস্তিত্ব ছেড়ে চলে গেলেন, আজীবন কলকাতায় থেকেও প্রকৃত অর্থে শেষ আন্তর্জাতিক বাঙালী। এক উপাখ্যান শেষ হল, তবু শেষ হল কি?

 

জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন

 

“তাদের মাটির গল্প- তাদের মাঠের গল্প সব শেষ হ’লে

 

অনেক তবুও থাকে বাকি—

 

তুমি জানো- এ পৃথিবী আজ জানে তা কি!!”

 

বাঙালী জাতি হিসেবে অনেক দিক থেকেই দুর্ভাগা, অনেক বঞ্চনার শিকারও বটে…

 

তবু আমরা আজীবন ঋণী থাকতে পারি বাংলা ভাষা ও তার বর্ণমালার কাছে আর সীমাহীন গর্ব অনুভব করতে পারি কারণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষায় অভিনয় করেছেন।

দুই প্রজন্মের স্মৃতিতে প্রদীপ ঘোষ

ঋতুরাজ প্রামানিক

 
 
 
 
 
 
 
 

কিংবদন্তী বাচিকশিল্পী প্রদীপ ঘোষের স্মৃতিচারণায় দুই প্রজন্মের বাচিকশিল্পী।

 

লিখছেন, ঋতুরাজ প্রামানিক।

 
 
 
 
 
 
 
 

কিছুদিন আগে চলে গেলেন কিংবদন্তী বাচিকশিল্পী প্রদীপ ঘোষ।উপসর্গহীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাঁর

 

জীবনাবসান হয়।এক শুক্রবার ভোররাতে তাঁর যোধপুর পার্কের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন

 

তিনি।মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৮বছর।বাচিক শিল্পের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হওয়ার পাশাপাশি তিনি

 

তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগে যুগ্ম তথ্য অধিকর্তা হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।২০১৭সালে

 

পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘কাজী সব্যসাচী পুরস্কার’ প্রদান করে।কবিতাপ্রেমী বাঙালির কাছে ‘কামাল

 

পাশা’,’আমার কৈফিয়ত’ বা ‘জোনাকি’ র মত কবিতাগুলি তাঁর কণ্ঠে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 
 
 

এই কিংবদন্তী শিল্পীর প্রয়াণে শোক স্তব্ধ আপামর কবিতাপ্রেমী বাঙালি।স্বনামধন্য বাচিকশিল্পী ব্রততী

 

বন্দ্যোপাধ্যায় জানান,’প্রদীপদার কণ্ঠের সঙ্গে আমার ছোটবেলা থেকেই পরিচয়।তাঁর বহু কবিতার রেকর্ড

 

শুনতাম।আর একলব্যের মত নেপথ্য থেকে ওঁর যা কিছু মুগ্ধকর বাচিক উপস্থাপনা,সেগুলো শিখে নেওয়ার

 

চেষ্টা করতাম।আমি যখন একাদশ শ্রেণীতে তখন ওঁর সঙ্গে আমার মুখোমুখি আলাপ হয়।তারপর কলেজ

 

জীবনের সময় আমি আবৃত্তি পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হই।তখন প্রদীপদার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে।আমাদের

 

হৃদয়পুরের বাগানবাড়িতেও উনি এসেছেন।ফলে আমার পরিবারের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল।ওঁর পরিবারের

 

সঙ্গে আমার এখনো যোগাযোগ আছে।একজন সফল আবৃত্তি শিল্পীর বাইরেও উনি ছিলেন একজন আন্তরিক

 

মানুষ।আমাকে বহু সময় গল্পের ছলেই বুঝিয়ে দিতেন কোনো জটিল তত্ত্ব বা ব্যাকরণ।এছাড়াও আমার সংস্থার

 

কাজে যখনই ডেকেছি তিনি সারা দিয়েছেন।এমন একজন অভিভাবককে হারিয়ে খুবই হতাশ লাগছিল

 

সেদিন।খুবই আঘাত পেয়েছি।কিন্তু জীবনের অনিবার্য নিয়মে একদিন তো চলে যেতেই হয়।তবে এই

 

পরিস্থিতিতে বহু প্ৰিয়জন,বন্ধুজন বা প্রদীপদার মত গুরুজন চলে যাচ্ছেন।হয়ত এই পরিস্থিতি না হলে

 

তাঁদেরকে আমাদের মাঝে আরও কিছুদিন পেতাম।তবে মন কে শান্তনা দিচ্ছি এই বলে যে অন্তরীক্ষ থেকে তাঁরা

 

আমাদের মাথায় আশীর্বাদের হাত রাখছেন।

 
 
 
 
 
 
 
 

জনপ্রিয় বাচিকশিল্পী মুনমুন মুখার্জী স্মৃতিচারণায় বলেন,’আমি যে মফস্বল শহরে বড় হয়েছি,প্রদীপদা সেখানে

 

যখন কবিতা বলতে এসেছিলেন,তখন আমি খুব ছোট।ওঁর সঙ্গে আলাপ হতে পারে এটা তখন মনে

 

হয়নি।কারণ,কিছু মানুষ ধরা ছোঁয়ার বাইরে বিচরণ করেন।তাঁকে দেখে ও তাঁর কণ্ঠে ‘দেবতার গ্রাস’কবিতাটি

 

শুনে আমার সেই বয়সে তেমনই ধারণা হয়েছিল।তারপর যখন বড় হলাম,বিভিন্ন মঞ্চে কবিতা বলার সুযোগ

 

হয়েছে।তখন আবার দেখেছি প্রদীপদাকে।তিনি অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকতেন।কিন্তু তখনও পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে

 

আমার একটা দূরত্ব ছিল।আমি তাঁর কাছে যাওয়ার সাহসটুকু অর্জন করতে পারিনি।পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রসদনে

 

কবিপক্ষের একটি অডিশন হয়।বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন গৌরী ঘোষ ও প্রদীপ ঘোষ।আমি সেইবার প্রথম

 

হয়েছিলাম।আমার জীবনে এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি।তারপর যখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ হয়েছে,কথা বলে

 

ভাবতাম এত উচ্চতার মানুষ এত বিনম্র ও আন্তরিক হতে পারে!সেই থেকে আস্তে আস্তে ভীতিটা ভক্তিতে পূর্ণতা

 
 
 
 
 
 
 
 

পেয়েছে।আমার সংস্থার প্রথম বার্ষিক অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন।এবং অবাক করা বিষয় উনি বিকেল

 

পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমীতে বসে কবিতা শুনে গেলেন।আমরাও হয়ত আজকাল এমন

 

করে উঠতে পারিনা।আরেকটা বিষয়,ওঁর সঙ্গে ফোনে কথা বললে মনে হত বাড়ির বাবা বা জেঠুর মত কোনো

 

অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলছি।এত আপন,এত কাছের।বার্ধ্যকজনিত কারণে অসুস্থতার মধ্যেও কী অদম্য

 

প্রাণশক্তি ছিল মানুষটার।আমাকে একদিন ফোন করে আমার ও আমার মেয়ের কুশল মঙ্গল জিজ্ঞেস

 

করলেন।অনেকক্ষন কথা হল।তারপর একদিন সহসা তিনি চলে গেলেন।কিছু যাওয়া সময়ের হিসাবে

 

সত্যি।কিন্তু এটাও বড় সত্যি যে কিছু মানুষ এতটাই অপরিহার্য হয়ে যান আমাদের জীবনে,যে তাঁদের চলে

 

যাওয়াটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।যেমন প্রদীপদার মত সদা হাস্যময় মানুষটার সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা

 

হবেনা,মানাটা কষ্টকর।

দেখা আরো দেখা

ময়ূরী মিত্র

 
 
 
 
 
 

জীবনের পিছনে কতটা লেগে থাকবো আর কতটা দূরেই বা থাকবো এ নিয়ে অভিনেতার মন ও মগজে ধাঁধা

 

বা খিদে খিদে ভাবটা জমে থাকাটাই দরকার | দরকার কি বলছি, বড্ড দরকার | শিল্প বানানোর দিক

 

দিয়েও এ ধাঁধা পুষ্টিকর |অভিনয়ে জীবন থাকবে বৈকি | সাপ্টাসাপটি হয়ে থাকবে | কিন্তু নিপাট নিভাঁজ

 

হয়ে নয় | জীবনকে নিখুঁতভাবে দেখা আর দেখামাত্তর সেই জীবনটাই অভিনীত চরিত্রে ঠেসে ঠুসে ঢুকিয়ে

 

দেয়ার ঠিক কী বিপত্তি ঘটতে পারে ,বলি ? হলো কী —নাট্যকার মনোজ মিত্র মশায় আমাকে একবার

 

অভিনয় করতে দিলেন একটি বাজারে মেয়েমানুষের রোল | রোলটিকে তার লিখিত রূপের চেয়েও জ্যান্ত

 

করে স্বয়ং নাট্যকারকে তাক লাগিয়ে দেব বলে ঠিক করলাম | ফিদিন সন্ধেতে সোনাগাছি অঞ্চলে ট্যাক্সি

 

নিয়ে ঘোরাফেরা শুরু হলো | বলাবাহুল্য আমার এ জাতীয় উঞ্ছবৃত্তিতে নিজেকে জাত অভিনেত্রী হিসেবে

 

দাঁড় করাবার যতখানি শ্রম ছিল তার এক কণা মেধাও ছিল না অভিনয়টিকে মানসনির্ভর বা মনজাত

 

করার | অভিনয় শুরু হলো মঞ্চে | নকল করার সাফল্যে মনে খুশিয়ালিও এলো দুমদাম | চিনেপটকার

 

মত অহংকার আওয়াজ দিল ফুটফাট | ওমা দেখি —এত সুফলের মাঝেও কিছদিন বাদ থেকে অদ্ভুত এক

 

মুশকিল বিধতে লাগলো আমায় | বোধহয় সুফলটা সহজে হয়ে যাচ্ছিল বলেই | মন বলতে লাগলো —

 

‘ওহে ভাই ! ক্যায়াবাত ! ক্যায়াবাত ! একবারে ওদের মতো হাঁটছ — চলছ —শ্বাস ফেলেছো যে !

 

কিন্তু কথা বলাটা একটু তোমার ‘তুমি তুমি ‘ ভাবটাকেই বেশি দেগে দিলো না আজ ? ‘ পরের শোয়ে

 

ঠিক উল্টো |—’আরে আজ তো কথা বললে ওদের মতো কিন্তু তাকালে যখন??? —আরে এতো ময়ূরী !

 

আরে অমুক নাটকের তমুকে এভাবেই যেন ঠিক এইরকম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছিলে না ও ? ‘ —ভেতর ফাঁকা

 

হতে লাগলো আমার | ওদের মতো করে সুখ দুখের চাপান দিতে দিতে —যা যা যা —একী হলো ? এ

 

যে দেখি চরিত্রের দুঃখটাই কখন খুইয়ে বসেছি আমি | অনেকটা বাচ্চা মেয়ের ফিনফিনে চুলে বেণী গাঁথা

 

| কখনো ফিতাটা দীঘল —আবার কখনো চুলটাই লোপাট | হাতের ফিতে হাতেই |

 

* * *

 

রাত–দুপুরের থানাদার কুকুরের মতো বিশুদ্ধ আবেগের বাস নিতে নিতেই শতখান হতাম তখন | কী

 

বলব —অভিনীত চরিত্রের জন্য লাগসই কোনো আবেগে সিধিয়ে থাকা কিংবা নেহাতই এলোঝেলো একটা

 

দুটো আবেগ , যা কিনা তার নিজের বেগেই আসি আসি করছে, কোনোমতে তাকে এদিক সেদিক করে

 

ঠেকিয়ে রাখা —দুটোই চলতো তখন আমার , স্রেফ আমার মর্জিতে | এমন একটা সময় নাট্যকার

 

মনোজ মিত্র মহাভারত নিয়ে একটা নাটক লিখলেন | নাম —যা নেই ভারতে | আমাকে দিলেন এক

 

বুনো মায়ের চরিত্র —পেটভর্তি খিদে নিয়ে, জ্বলতে–জ্বলতে, পুড়তে–পুড়তে যে কিনা মহাসন্তুষ্টিতে পালপোষ

 

করে চলে কৌরবদের হাড়হাবাতে জারজ বাচ্চাগুলোকে| আমার গিন্নিবান্নি চেহারা দেখে দু–চারজন

 

শলা দিলেন —’ ঘুরে টুরে তো বেড়াও ! যাও না পুরুলিয়ার জঙ্গলে |আদিবাসী বুড়িদের একটু

 

নেড়েচেড়ে দেখোই না |এরকম একটা কালজয়ী নাটকে অভিনয় করবে একটু গা ঘামাবে না? তোমাদের

 

বামেদের তো হয়ে এলো হে ! এবারে জঙ্গলে জঙ্গলে নয়া বাম ! আর ভেবে দেখো পাতকিনীর { আমি

 

যে চরিত্রে অভিনয় করছিলাম } ঐ পালিত শিশুগুলো , তারা তো রাজবংশেরই সন্তান | এখানেও দেখো

 

তাই —জঙ্গলের এরা তো বামদেরই অংশ—এখন দেখো বামেরাই কেমন এদের উৎপাটন করছে |

 

‘—অনর্গল | অনর্গল এইসব বলেই চললেন আমার নাট্যবন্ধুরা | সত্যি বলতে কি —জীবন দেখার এই

 

সব নিভাঁজ ছিরিছাদ বা চরিত্র নির্মাণের এই গা ছাড়া মন হারানো পন্থার কথা যত শুনতে লাগলাম

 

চরিত্রটি অভিনয়ে যেন ধক চলে যেতে লাগলো | দোনামনা শুরু হল অভিনেতা ময়ূরীর — যে

 
 
 

দোনামোনায় মনঃসংযোগ ও মনচক্ষু দুইই বিলীন হতে থাকে এক অনর্থক উত্তেজক সংশয়ে | সেদিন

 

অভিনয়ের অব্যর্থ সূত্র ধরিয়ে দিয়েছিলেন নির্দেশক মনোজ মিত্র | পাতকিনীকে কেমন করে মঞ্চে

 

আনতে হবে তা বোঝতে বসে কথাগুলো ছিল তাঁর এইরকম —’ যে মহাভারতের ওপর ভর দিয়ে

 

আমার এই নাটক উচ্চবর্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেই মহাভারত তোমার কোনো কম্মে লাগবে না | তোমার

 

আশেপাশের কোনো চরিত্র বা আগেপিছের কোনো দৃশ্য থেকে বাড়তি আবেগ সংগ্রহে একদম ক্ষেপ না |

 

দেশ কাল ডাইনে বাঁয়ে পাশ ফিরে আর দেখো না | ওতে তোমার দৃষ্টিই থিতিয়ে পড়বে কেবল | তুমি

 

কেবল তোমার দেখার লক্ষ্যটিকে অমোঘ করে নাও —স্ফীত করো মনচোখের পরিসর | কেবল দেখে

 

যাও —মানুষের জন্মলগ্ন থেকেই অনন্ত ক্ষুধায় খাক হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ড আর সেই ক্ষুধায় ঘাস মাটি কীট পতঙ্গ

 

কামড়ে বেড়াচ্ছে যারা তারা তোমারি বান্ধব — তোমারি পরিজন | এ দেখতে গিয়ে অভ্যন্তর যদি

 

তোমার অগ্নিগর্ভ হয় , কদাকার হয়ে যায় সেও ঠিক | আর যদি স্থবির বনে যাও কি প্রাজ্ঞ হয়ে

 

ওঠো সেও বা ভুল কি ? ‘ সে দেখা আজও চলছে আমার | অভিনয়টিও অসমাপ্ত থেকে গেছে |

 

পাতকিনীর সেই রাগে ভেপে ওঠার দৃশ্যটিতে বেপরোয়া লাফ দিই আমি | আবহের সাথে লাফনাচ

 

মুহূর্মুহু বেতালা হয় | বন্ধুরা বেজার হন | বলেন —’ আরে আরে অভিনয়ের অ আ জানে না

 

মেয়েটা ! —মঞ্চে নেচেকুঁদে কাদের হয়ে মাতব্বরি করে এ ? ‘ গোপনে মুচকি হাসি —এই যা

 

!,আমার সেই নিক্তি ধরে হাসিকান্না কখন খুইয়ে বসলাম রে ? অভিনেতার ‘observation ‘ এবং ‘

 

Imagination ” এই বিশ্বপ্রকৃতির মাঝে কতখানি হাত পা মেলতে পারে??

 
 
 

* * *

 
 
 

তখন শুটিং শেষ | সূর্য নেমে যাচ্ছে পশ্চিম পানে | আলো মরছে | দ্রুত মরছে | অভিনেতা কালী

 

ব্যানার্জি দেখলেন —দূরের মাঠের আলপথ দিয়ে যাচ্ছে এক ফেরিওয়ালা আর তার পিঠের বোঁচকা দিয়ে মুখ

 

বাড়িয়ে রয়েছে স্পঞ্জের খেলনা পাখি | লাল নীল হলুদ কমলা কিংবা ক্যাটকেটে গোলাপি | খেলনাওয়ালার

 

দড়িতে বাঁধা থেকে বেশ একটা গুচ্ছমত হয়ে আছে পাখিগুলো | গায়ের রঙগুলোও নয় তাদের খুব

 

বাস্তবোচিত | বিদ্যুতবেগে পাখিওয়ালার পিছু দৌঁড়োতে লাগলেন কালী ব্যানার্জি | হতভম্ব ফেরিওয়ালার ঝুড়ি

 

থেকে হাত ভর্তি করে তুলে নিলেন খেলনাপাখির দঙ্গল | খানিক পরে —সবাই দেখলো মাঠ দিয়ে সজোরে

 

ছুটতে লেগেছেন অভিনেতা কালী ব্যানার্জি | হাতের তালুতে তাঁর প্রাণহীন পাখিদের সার — সেই জড়

 

বস্তুদেরই বলে চলেছেন — ‘ কী রে উড়বি নাকি ? দুটো ফলের কুচি খাবি ? খেলে তাকত পাবি |

 

আরো আরো উড়বি | ‘শুটিং পার্টির লোক হাসছে | বোধহয় পাগল হয়ে গিয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা |

 

আর সেই ফেরিওয়ালা —যে কিনা সারাজীবন স্পঞ্জের পাখি বেচেছে — কাঁপছে থরোথরো | তার তৈরি

 

স্পঞ্জ পাখির এত মূল্য ? এত দম ? অভিনেতার তালুতে আছারিপিছাড়ি খাচ্ছে প্রাণছাড়া পুতুল পাখি |

 

উড়বে এবার | তুরন্ত | কালীবাবু খেয়াল করেননি দূর থেকে তাঁর এই মহাকর্মে চোখ রেখে বসে আছেন

 

তাঁরই প্রিয় অনুজ —অভিনেতা মনোজ মিত্র | ঠিক যেমন করে সক্রেটিসের প্রতিটি স্টেপ খেয়াল করতেন

 

প্লেটো | মনোজ যেদিন তাঁর মেয়েকে এ গল্প বলেন —হতভাগা মেয়েটা দেখেনি তার বাবার চোখে কফোঁটা

 

কল্পনা জমেছিল|

গায়কী অঙ্গ

১ম পর্ব

অরিত্র দে

 
 
 
 
 
 

আমাদের বাড়িতে একটা তানপুরা ছিল। আমার দুই দিদি বাজাত। শখে বাজাত না। যত্ন করে বাজাতে শিখত।

 

আলগোছে কোলের পাশে বসতো তুম্বা। সরু শক্ত দেহ কাঁধের পাশ দিয়ে উপরে উঠে যেত। ঋজু দৃঢ় তারে ডান হাতের

 

নরম আঙুল আলাপ করত। যন্ত্রের সুর অযান্ত্রিক। রিনরিনে। জলদগম্ভীর। মনে হত অষ্টপ্রহরের মূর্ছনা খুলে

 

যাচ্ছে। একে একে। পরতে পরতে। ঠিক যে সুরে ভোর হয়। বেলা বাড়লে যে সুরে সূর্যের তেজ বাড়ে। দুপুর গড়িয়ে

 

বিকেল হলে যে সুরে কল্লোল বাড়ে। যে সুরে সন্ধের শাঁখে ফুঁ পড়ে। আর সারাদিনের ক্লান্তির পরে মহারাত্রির

 

প্রশান্তি আসে যে-সুরে। যন্ত্রের গায়ে থাকত জামা। যত্ন করে হাতে ধরে গড়ে তোলা। রঙিন। মানানসই। ঘরোয়া।

 

অযান্ত্রিক। অনেক পরে বুঝেছি এটা স্বাভাবিক। সহজাত। বুঝেছি শব্দ ব্রহ্ম। জীবনে সুরকেও যাপন করতে হয়।

 

যত্ন করতে হয়। ধরে রাখতে হয়।

 
 
 
 
 
 
 
 

সে এক সকাতর সকাল। রাতের চেয়েও অন্ধকার। বাবাকে হারিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছে রামতনু। আগের চেয়ে

 

অনেকটা বেশি। ঘরবাড়িগুলো বিরক্তিকর। চৌহদ্দিটা বিসদৃশ। ক্ষতের আঘাত বিরামহীন। বাড়ীর অদূরেই মহাদেবের

 

থান। চাতালেই সারাদিন কাটে। গানে গানে। গুরুদেবের সুরে। সেই কবে এক বালক একবার বাঘের ডাক ডেকেছিল।

 

বনপথে। সেই ডাক শুনেছিল হরিদাস। ভক্ত হরিদাস। মধুরভাবে পূর্ণ। ভক্তিভাবে নিখুঁত কণ্ঠ। নির্মেদ সুর।

 

ঈশ্বরারোপিত। সর্বজনবিদিত সংগীতগুরু। তার কানে যখন বেজেছে তখন এ ছেলের হবে! খুঁজে খুঁজে মিলল

 

ব্যাঘ্রকণ্ঠ। নেহাতই শিশুসুলভ। কিন্তু প্রাণচঞ্চল। অনেকটা নিখুঁত। জাদু আছে। একটু ঘষে মেজে নিলেই হয়। তাই

 

ঠিক হল, বাড়ি ছেড়ে বারো বছর সংগীতের পাঠ নেবে বালক। থাকবে গুরু হরিদাসের ডেরায়। বাবার সুপ্ত বাসনা ফলল

 

তবে! অতীত আজ ভিড় করে আসছে। অগত্যা গান হোক।

 
 
 
 
 
 
 
 

ইশকুলে থাকতে ‘ছেঁড়া তার’ পড়তাম। তুলসী লাহিড়ীর। আমাদের পড়তে হত। সিলেবাসের পড়া। রহিম খেটে মরে।

 

ফুলজান গেরস্থালি সামলায়। সাজায়। নিজেও সাজে। রহিম সংসার বাঁচিয়ে পরিবারের মন যোগায়। নিজের মন ভরায়।

 

বাঁধন শক্ত হতে হতেই একদিন পট্‌ করে তারটা ছিঁড়ে যায়। অমোঘ ষড়যন্ত্র। পেটের টান। আর ফুলজান। তাকে

 

ছাড়তেই হয়। তিনবার ‘তালাক’ শোনা যায়। আর জোড়া লাগেনি। নিষ্ঠুর লেখককে দোষারোপ করেছি প্রায়শই। এ রাগ

 

কোমল ছিল না। প্রয়োজনে ঝংকার বদলাতে পারত। বদলায়নি। ঘরছাড়া সুরের একটা অপার্থিব ‘মেকানিক্যাল’

 

আলাপ অনেক পরে পাই। সেখানে নতুন ঘর। অচেনা ঝংকার।

 
 
 

ইয়া আল্লাহ্‌, ইয়ে লড়কা তো একদম দিলবার মালুম হচ্ছে! চমকে যায় সন্ন্যাসী। হিন্দুস্তান কম দেখা হল না।

 

মসজিদ-মন্দির-মজহব। দরগার সুরগুলোও চেনা হয়ে গেছে। পহেলা দিন থেকেই। নসিবত ভাল। ফরিদুদ্দিনের জিগর

 

হয়ে এসেছে। সুফি কবি ফরিদুদ্দিন। নানাজানের শাইরি শান্তির। বেশ পছন্দ হয়। দিল-এ হাওয়া লাগে। নতুন সুর দিতে

 

ইচ্ছে হয়! খোদাতালা মঞ্জুর করলেন। রাবাবে নজর পড়ল। শুধুই বাজনা। সেই শুরু। সুরে-বেসুরে আল্লার সন্ধান

 

চলছে। একবার মিলছে। একবার মিলছে না। গোয়ালিয়র হয়ে মোগল দরবার। বৃন্দাবন হয়ে আফগানী গজল। দিল্লী

 

হয়ে গুজরাত। ক্লান্তিহীন সুফি সন্ন্যাসী। শ্রান্তিহীন আফগান। শাহ সুলতান হাজী হামিদ মুহাম্মদ ঘাউস

 

গোয়ালিয়রী শাত্তারি। এখন আরামে চোখ বুজে আসছে। শিবের চাতালে মাথা দেয় সাধক। এবার মিলেছে। ঠিক ঠিক

 

মিলেছে। নূরের রোশনি। কণ্ঠহার। আল্লার ইমান।

 
 
 
 
 
 
 
 

‘বীণা’ বললেই ইশকুলের কথা মনে পড়ে। সরস্বতী পুজো। ইশকুলের পুজো। আর পাড়ার পুজো। দুয়েই সমান অধিকার।

 

সকাল সকাল স্নান করে বসে আছি। মুখে কিছু তুলিনি। পুষ্পাঞ্জলি দেব। কী গর্ব! কিন্তু বেলা বাড়ছে। আর খিদের

 

চোটে গর্ব চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে। এদিকে পুরুত ঠাকুরের খোঁজ নেই। খুব রাগ হচ্ছে! এরপর কখন ইশকুলে যাব? আরও

 

পরে তিনি এলেন। এসেই হম্বিতম্বি। কেউ ফুল ছুড়বে না। পুজোর ফুল কম আছে। তাই সই। তিনি মন্ত্র পড়লেন।

 

আমরা ঠোঁট নাড়লাম। মন্ত্র ভুল বললাম। মন্ত্র এড়িয়ে গেলাম। কেবল একটাই মন্ত্র ঠিক বললাম। ‘জয় জয়

 

দেবী’। তারপর সাইকেলটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সোজা ইশকুল। অথচ ইশকুলে থাকতে কোথাও ‘বীণা’র কথা পড়িনি।

 

ওই মন্ত্রটুকু বাদে। আর রাজা রবি বর্মার ছবিতে। দেবী সরস্বতী। ‘বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে’। বেদের ভঙ্গি।

 

বেদের ধারক। সনাতনী। বীণাও সনাতন। মহর্ষি নারদের ‘যন্ত্র’। বীণার একটা চোখে পড়ার মতো ইতিহাস রয়েছে।

 

বেড়ে ওঠার ইতিহাস। অদল-বদলের ইতিহাস। ভিসুয়াল হিস্ট্রি। অজন্তা-ইলোরা। খাজুরাহো। অখিলন্দেশ্বরী

 

মন্দির। হয়সলেশ্বর মন্দির। রামাস্বামী মন্দির। চিদাম্বরম মন্দির। আইন-ই-আকবরী। জয়পুর পেইন্টিংস।

 

ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়াম। কালীঘাটের পট। হাওয়ামহল। এসবই চোখে দেখার। কানে শোনার নয়।

 

বাস্তবে বীণারঞ্জন ঘটেছে অনেক পরে।

 
 
 

বাবার মুখেই প্রথম শোনা। সন্ত হরিদাস। পঁচিশ বছরেই সন্ন্যাসী। তখন থেকেই বৃন্দাবনে। গান গায়। শুধু

 

ঈশ্বরের জন্য। বাঁকাবিহারী আর তার বিনোদিনী রাই। যুগলমূর্তি। বলতে বলতে বাবার দু’হাত আপনা থেকেই জোড়

 

হত। রামতনুর মনে পড়ে। লোকে বলত ললিতার পুনর্জন্ম। তাই হরিদাস রাধাকৃষ্ণের লীলা ধরেছে। সখী না হলে কি

 

আর কেউ রাধাপ্রধান পদ লেখে? লিখতে পারে? বাবা খুব বিশ্বাস করতেন। বলতেন, অমন ‘কেলি মালা’ আর কে-ই

 

বা লিখবে! ব্রজভাষা ধন্য! ব্রজবাসী ধন্য! নিধিবন প্রাণের লোক পেয়েছে। ঘন ঘন নিশ্বাস পড়ত বাবার। মুখ লাল।

 

রাধিকার রাগে চোখের কোণ টলটল করত। সেই বিষ্ণুপদ পেল নিম্বার্করা। আর ধ্রুপদ নিল বৃন্দাবন। রাগ নিল।

 

কেদার, গৌরী, মল্লার আর বসন্ত। রামতনুর রইল দ্বাদশবর্ষীয় গুরু-শিষ্য পরম্পরা। গোয়ালিয়র ঘরানা।

 
 
 

খোরাসান থেকে ভারত। বেহৎ দূর। তবু এলেন মুহাম্মদ সইফুদ্দিন। খানা-বাজনা হিন্দুস্থানেই হোক। পাটিয়ালিতে

 

দিল বসলো। উত্তরপ্রদেশ। এই মুলুকেই বিবিজান এক লড়কা পয়দা করেছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। খাসা বান্দা মালুম

 

হয়। আবুল হাসান। নামের সাথে কাম ভি বহুৎ আচ্ছা। ওয়াক্তের সাথে পহেচান হয়। শাইরিতে বাত করে। লেখে। গান

 

করে। তারে আলাপ করে। সুর শুনে আব্বার দিল জুড়ায়। গান শুনে উস্তাদ মালুম হয়। হলোও তাই। উমর বাড়তেই

 

দিল্লীর রাস্তায় পা পড়লো। পা বাড়লো। হিন্দুস্থানে দাস সালতানত্ চলছে‌। সুলতান গিয়াসুদ্দিনের ইন্তেকালেই বদ

 

নসিবত শুরু হয়েছে। দিল্লীর গদ্দিতে নতুন সুলতান কাইকুবাদ। সরাব আর হারেমে মশগুল। উমর ভি কম। দিল লাগে

 

না। তবু দরবারে বহাল হলেন আবুল হাসান। ওয়াক্ত বদলাল জলদি। সুলতান বদলাল। সালতানাত্‌ বদলাল। দিল্লী

 

নিল জালালুদ্দিন। হিন্দুস্তান নিল খিলজি সালতানাত্‌। আবুল হাসান দরবারেই থেকে গেলেন। বেপান্‌হা আলাপ

 

করলেন।

 
 
 
 
 
 
 
 

‘ঘরানা’-র মানে বুঝিনি অনেকদিন। যখন বুঝেছি তখন ‘বাহিরানা’-ও বুঝেছি। টাকার এপিঠ-ওপিঠ। পছন্দ-অপছন্দ

 

অনেক। কেউ একজন সাত রাজার ধন এক মানিক পেয়েছে। এখন ধরে রাখার একটা ঘর চাই। নিজের ছন্দে তৈরি।

 

সময় থাকতে ঘরদোর হল। কথা পাঁচকান হল। ততদিনে গোপন জিনিস আরও গোপনে। আরও যত্নে। এমনিতে মুখ

 

খোলে না। কঠিন ঠাঁই। রোজ রাতে বের করে। রোজ হাতে ছুঁয়ে দেখে। আলগোছে। সন্তর্পণে। পরিবার রসালাপ করে।

 

পরম্পরা রসাস্বাদন করে। আর পড়শিরা গল্প শোনে। কিন্তু রাজার ধন টুনির ঘরে আসে না। কখনও সখনও এসেও

 

পড়ে। হরির লুট। আবার রাজপথ ধরে রাজদরবারে। তারপর একদিন রাজা গেল। রাজ্য গেল। রাজার ঘরের ধন টুনির

 

ঘরেই এল। মালিকের মাণিক্য মুক্তি। ‘ঘরানা’-র বহিঃপ্রকাশ। আর ‘বাহিরানা’-র স্বাচ্ছন্দ্য অন্তর্ভুক্তি।

 
 
 

আব্বার কাছেই এ জিনিস দেখেছে আবুল। হিন্দুস্তানের শান। এখানকার আদমিরা বলে ‘যন্তর’। এখানকার কিতাবে

 

দুসরা একটা নাম আছে। বহুৎ কঠিন। ‘ত্রি-তন্ত্রী বীণা’। মতলবটা মালুম হয়। তিনটে তার। আবুল বলে ‘সেহতার’।

 

দুসরা যন্ত্র আর আবুলের দিল-এ লাগে না। দুসরা আওয়াজ হারাম মনে হয়। দরবারে কেউ অ্যাইসা সুর তোলে না।

 

তুলতে পারে না। আবুলের সেহতারে দিলচাস্পি রাখে পুরা দরবার। মালুম হয় আবুলের। ততদিনে ‘আমীর’ খেতাব

 

পেয়েছে আবুল হাসান। খিলজি সালতানাত্‌ বলেছে ‘খুসরু-ই-শাইরান’। আর হিন্দুস্থান বলেছে ‘আমীর খুসরু’।

 

হিন্দুস্থান জেনেছে সেহতারের জিগর।

বহমান জীবনসংগীত

অজন্তা সিনহা

 
 
 
 

 

 

প্রেক্ষিত একেবারে আলাদা হলেও এই সিরিজ দেখতে দেখতে একদা দূরদর্শনে প্রদর্শিত ‘মির্জা গালিব’;

 

ধারাবাহিকের কথা মনে পড়তেই পারে। বিশেষত, আমাদের মতো ষাটোর্ধ্বদের। টিভির পর্দায় গালিবের গজল

 

আর ওয়েব সিরিজে পণ্ডিত রাধেমোহন রাঠোরের শাস্ত্রীয়সংগীত চর্চা। সংগীতের দু’টি সমৃদ্ধ বহমান ধারা,

 

যেখানে জীবন ও সংগীত (বা কাব্য) মিলেমিশে একাকার। দু’টি সংগীতমুখর জীবনকেই একেবারে প্রাণময় করে

 

তোলেন নাসিরুদ্দিন শাহ তাঁর অননুকরণীয় অভিনয়ের মন্ত্রজালে। টেলিভিশনের গালিব থেকে ওয়েব সিরিজের

 

রাধেমোহন, ভারতীয় সিনেমার এই কালপুরুষ যেন বারবার নিজেকেই আবিষ্কার করে চলেন। তাই ইতিহাসের

 

গালিব বা চিত্রনাট্যের রাধেমোহন, দু’জনেই আমাদের সামনে রক্তমাংসের অস্তিত্ব হয়ে ওঠে।

 

১৯৮৮-র গুলজার পরিচালিত ‘মির্জা গালিব’ -কে সামান্য হলেও যে স্মরণ করিয়েছে ২০২০-র ‘বন্দিশ

 

ব্যান্ডিটস’, তার জন্য নিশ্চয়ই বাহবা জানাতে হয় পরিচালক আনন্দ তেওয়ারিকে। থিয়েটার ও সিনেমার এই

 

প্রতিভাবান তরুণ অভিনেতা কাজ করেছেন বিক্রমাদিত্য মোতোয়ানে-র ‘উড়ান’, রাকেশ রোশনের ‘কাইটস’ ও

 

আরও বেশ কিছু ছবিতে। ১০ পর্বের এই ওয়েব সিরিজে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন চিরাচরিত প্রাচীন ও নবীনের যে

 

সংঘাত, তাকেও কত সংযত, সৃষ্টিশীল এবং ইতিবাচক আঙ্গিকে দেখানো যেতে পারে। সচরাচর এসব ক্ষেত্রে

 

সস্তা মেলোড্রামার প্রয়োগই বেশি চোখে পড়ে।

 
 
 
 
 
 
 
 

প্রাইম ভিডিও-য় প্রদর্শিত এই সংগীতনির্ভর সিরিজ অবশ্য নানা কারণেই ব্যতিক্রমী বলে বিবেচিত হবে।

 

প্রজন্মগত পার্থক্য ছাড়াও রয়েছে সংগীতের দু’টি ঘরানার লড়াই, যার মধ্যে আবার প্রচ্ছন্ন সম্পর্কের

 

টানাপোড়েন এবং সেই অনুসারে মান-অভিমানের রসায়ন। মান-অভিমান থেকেই চ্যালেঞ্জ, শত্রুতা, ভুল

 

বোঝাবুঝি। পুরো বিষয়টা পড়তে যত জটিল মনে হচ্ছে, দেখতে তেমনটা মোটেই লাগে না। যার কারণ এক

 

অসাধারণ চিত্রনাট্যে বিষয়কে স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত করেন পরিচালক। কাহিনি লিখনে অমৃতপাল সিং

 

বিন্দ্রা, লারা চাঁদনি ও পরিচালক স্বয়ং। স্ক্রিনপ্লে অমৃতপাল সিং বিন্দ্রা। বলতে দ্বিধা করব না, শুরু থেকেই

 

সিরিজের লেখক টিমের কাছে খুব পরিষ্কার ছিল, দর্শককে কী তাঁরা বলতে চান, সেই বার্তা। সিনেমা, টিভি

 

ধারাবাহিক বা ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে সবসময় এই নিপুণতা মেলে না। এছাড়াও অসাধারণ লোকেশন, প্রতিটি

 

দৃশ্য রচনার ক্ষেত্রে ডিটেলিং, ঝকঝকে ক্যামেরা, স্মার্ট এডিটিং ইত্যাদি বহিরঙ্গের কাজগুলি এতটাই উন্নত

 

যে মনে হবে, হলে বসে সিনেমা দেখছেন।

 
 
 
 
 
 
 
 

অভিনয়ের কথায় পরে যাব। গল্পও বলব সংক্ষেপে। কিন্তু সবার আগে গানের কথা। শুধু গান শোনার জন্যই

 

‘বন্দিশ ব্যান্ডিটস’ দেখতে পারেন আপনি। শঙ্কর-এহসান-লয়ের অসাধারণ এক-একটি কম্পোজিশন, সঙ্গে কিছু

 

প্রচলিত প্রাচীন গানের ব্যবহারও আছে। অন্যদিকে পপ মিউজিক ! সেখানেও চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব। গানগুলি

 

গেয়েছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ফরিদ হাসান, মহম্মদ আমন, মামে খান, রবি মিশ্র, শঙ্কর মহাদেবন,

 

জাভেদ আলি, শিভম মহাদেবন, জোনিতা গান্ধী, প্রতিভা সিং বাঘেল ও আরমান মালিক। শিল্পী নির্বাচনে এতটুকু

 

ত্রুটি রাখেননি শঙ্কর মহাদেবন টিম । প্রত্যেকে তাঁদের গানের প্রতি সুবিচার করেছেন। গান লিখেছেন দিব্যাংশু

 

মালহোত্রা, তানিষ্ক এস নবর ও সমীর সামন্ত। পাঠক ভাবতেই পারেন এক ওয়েব সিরিজের প্রতিবেদনে গান

 

নিয়ে এত কথা ? তবেই বুঝুন কতটা গভীরে প্রবিষ্ট এই সিরিজের গানের প্রভাব। সংগীতনির্ভর সিনেমা বা মেগা

 

দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের আগেও হয়েছে। কিন্তু তার সবগুলি উত্তরণে পৌঁছয় না। আসলে বিষয়টা এখানে

 
 
 
 
 
 
 
 

বিচ্ছিন্ন নয়। প্রতিটি দৃশ্যপট রচনায় গান অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে। সেই নির্যাস আপনারাও উপভোগ করবেন এই

 

সিরিজ দেখার মুহূর্তগুলিতে।

 

নাতি রাধে-র (ঋত্বিক ভৌমিক) ওপরেই পণ্ডিত রাধেমোহন রাঠোরের ভরসা। তাঁর সৃষ্ট ঘরানাকে পরম্পরায়

 

এগিয়ে নিয়ে যাবে রাধে। দিবারাত্র তাই নিয়েই চলছে সাধনা। রাধে জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও দাদুর আদর্শ

 

অনুসারী। তার সংগীত ভাবনা সেই সূত্রেই কিছুটা ঐতিহ্যবাহী, প্রথাগত, প্রাচীন ও রক্ষণশীল। এহেন রাধের

 

সঙ্গে পপ সেনসেশন তামান্না শর্মার (শ্রেয়া চৌধুরী) পরিচয় হওয়ার পর কী কী ঘটে, তাই নিয়ে এই সিরিজের

 

মূল কাহিনি আবর্তিত। তবে, তারও আগে কিছু ঘটনা-পরম্পরা আছে, যা মূল কাহিনীর গতিপ্রকৃতিকে বারবার

 

নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে পণ্ডিত রাধেমোহনের অতীত এসে হানা দেয়। স্ত্রী ও সন্তানকে ছেড়ে

 

স্থান পরিবর্তন করে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছিলেন তিনি একদা। দ্বিতীয়বার দার পরিগ্রহ এবং সেই সূত্রেই

 

প্রাপ্ত সন্তানদের নিয়েই এখন দিনযাপন তাঁর। সময় এগিয়েছে। রাধেমোহনের সম্মান, প্রতিপত্তি বেড়েছে।

 

প্রথম পক্ষের ছেলে দিগ্বিজয় (অতুল কুলকার্নি) কিন্তু ভোলেনি মায়ের অসম্মান এবং তার নিজের প্রতি

 

বাবার অবহেলা।

 
 
 
 
 
 
 
 

দিগ্বিজয় নিজেও একজন প্রথিতযশা শাস্ত্রীয়সংগীত শিল্পী। মায়ের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার ও তার

 

পাশাপাশি পণ্ডিত রাধেমোহনের ঘরানাকে প্রতিহত করা দিগ্বিজয়ের লক্ষ্য। রাধেমোহনের অতীতের আরও কিছু

 

পদক্ষেপও আছে কাহিনির আবর্তে ! এক আসরে তাঁর থেকেও ভাল গেয়ে উপস্থিত শ্রোতার নজর কেড়ে নেওয়া

 

মোহিনীকে (শিবা চাড্ডা) পুত্রবধূ করে ঘরে আনেন রাধেমোহন। উদ্দেশ্য মোহিনীর গান চিরতরে বন্ধ করে

 

দেওয়া। কারণ ঈর্ষা, যার থেকে রাধেমোহনের মতো শিল্পীও মুক্ত নন। অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারের কন্যা

 

মোহিনী ছিল দিগ্বিজয়ের প্রেমিকা। সেই বাবদও রাধেমোহনের প্রতি যথেষ্ট শত্রুতা পোষণ করে দিগ্বিজয়।

 

কিন্তু শুধুই কি শত্রুভাব? দিগ্বিজয় যে তার বাবার কাছে স্নেহের স্বীকৃতিটাও চায়। এই সংকটের জায়গাগুলিতে

 

নাসিরুদ্দিন ও অতুল দু’জনেই হৃদয়স্পর্শী। রাধেমোহনের এ পক্ষের দুই ছেলে রাজেন্দ্র ও দেবেন্দ্র নিজ নিজ

 

ক্ষেত্রে গুণী হওয়া সত্ত্বেও নানা কারণে বাবার বিরাগভাজন। রাধেমোহনের সব প্রত্যাশা এখন নাতি রাধেকে

 

ঘিরে! এটাই কোথাও এক বাড়তি চাপ যেন রাধের। এরই সঙ্গে সাংসারিক টানাপোড়েনেও জর্জরিত এই তরুণ।

 

এবার তামান্নার কথা। তার মা অন্যত্র থাকে পেশাগত কারণে।

 
 
 
 
 
 

উচ্চাকাঙ্ক্ষী মায়ের সঙ্গে তামান্নার মানসিক

 

দূরত্ব, এর থেকেই কোথাও সে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বাবাই তার আশ্রয় ও প্রশ্রয়। রাধের সঙ্গে তমান্নার

 

পরিচয় হয় বিচিত্র পরিস্থিতিতে। সাংগীতিক প্রেক্ষিতে দু”জনের একেবারে বিপরীত মেরুতে অবস্থান। তবু একে-

 

অপরের গুনগ্রাহী হয়ে ওঠে ও পরে হৃদয় বিনিময়। একটা বিষয় উল্লেখ্য, এই যে সংগীতের বিপরীতমুখী চলন,

 

অথচ পারস্পরিক শ্রদ্ধা, এই দিকটি বড় সুন্দরভাবে চিত্রনাট্যে অভিব্যক্ত। শঙ্কর-এহসান-লয়ের সংগীত

 

নির্মাণ এখানে সমান্তরালে চলে। দু”টি ছেলেমেয়ের একান্তের অনুভব, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, সাংগীতিক জীবন

 

কখনও এক হয়ে যায়, কখনও এমন দূরে চলে যায়, যেন আর কোনওদিন মিলতেই পারবে না! ‘বন্দিশ ব্যান্ডিটস’

 

তাদের দু’জনের স্বপ্ন, যা অধরাই থেকে যায়। সেই ব্যান্ডের নামেই সিরিজের নামকরণ। রাধে-তামান্নার

 

অসম্পূর্ণ প্রেম, রাধেকে নিয়ে রাধেমোহনের প্রত্যাশা, দিগ্বিজয়ের জেদপূরণ। কোনটা সফল হবে, কোনটা নয়?

 

বলা বাহুল্য, এই প্রশ্নগুলি থেকেই এই সিরিজের পরবর্তী সিজন কবে শুরু হবে, এই টানটান আগ্রহের দরজাটি

 

খুলে যায়। তবে, তার আগে প্রথম সিজন এখনও যাঁরা দেখেননি, তাঁদের খুব তাড়াতাড়ি দেখে নেওয়ার পালা।

 
 
 
 
 
 
 
 

অভিনয়ে আরও যাঁরা আছেন— রাজেশ তাইলাং, অমিত মিস্ত্রি, কুনাল রায় কাপুর, রাহুল কুমার, ত্রিধা চৌধুরী,

 

ঋতুরাজ সিং ও মেঘনা মালিক। এঁরা প্রত্যেকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চরিত্রগুলিকে জীবন্ত করে তুলেছেন।

 

গানের মতোই অভিনয়ও এই সিরিজের সম্পদ। নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন অতুল

 

কুলকার্নি ও শিবা চাড্ডা। মুখ্য দুই চরিত্রে নবাগত ঋত্বিক ও শ্রেয়াও বেশ পরিণত অভিনয় করেছেন।

 

প্রসঙ্গত, প্রত্যেক অভিনেতা, যাঁদের লিপে গান আছে বা যাঁরা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন, তাঁরা

 

প্রত্যেকেই একটা নির্দিষ্ট সময় এর অভ্যাস করেছেন। অর্থাৎ কর্মশালায় অংশ নেওয়ার মতোই এক

 

প্রক্রিয়া। এ পরিশ্রম, এই নিবেদন যে ব্যর্থ হয়নি, তা পর্বে পর্বে দর্শকও উপলব্ধি করবেন। ‘বন্দিশ

 

ব্যান্ডিটস’ সব অর্থেই এক ব্যতিক্রম, ওয়েব দুনিয়ায়।

 
 
 
 
 
 
 

এখনও পর্যন্ত মূলত ক্রাইম থ্রিলার, সায়েন্স

 

ফিকশনের প্রাধান্য আমাদের ওয়েব সিরিজগুলিতে। কিছুটা ফ্যামিলি ড্রামা। তারই মাঝে এই সিরিজ যে ভাবনার

 

দিক থেকে একেবারে ভিন্ন পথগামী, তাতে সন্দেহ নেই। তেমনই নিখুঁত এর নির্মাণ ও বাকি অনুষঙ্গ।

 

স্বাভাবিকভাবেই পরের সিজনের অপেক্ষায় আমরা সকলেই !

'লিভিং থিয়েটার' নিয়ে আলাপচারিতায় স্বয়ং

প্রবীর গুহ

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

ভান: আপনার নিজের দলের নাম ‘অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার’

 

কেন?

 

প্রবীর গুহ: দলের যখন নাম দেওয়া হয় খুব ভেবেচিন্তে দিই আমরা।

 

প্রথমে আমাদের নাম ছিল ‘লিভিং থিয়েটার’। সেইভাবেই চলতাম।

 

তারপর দলটা স্প্লিট হল। স্প্লিট হওয়ার পর মনে হল আমরা ওই

 

লিভিং থিয়েটার রাখবো না। নতুন ভাবে সাজাবো গোটা

 

ব্যাপারটা। তখন কী নাম হবে ভাবতে গিয়ে মনে হল আমাদের

 

দলের নামটা এমন হবে যেটা আমাদের ফিলোজফি। আমাদের

 

দর্শনটা যেন পরিষ্কার হয়ে যায় এতে। তখন আমরা নাম দিলাম

 

‘অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার‘। অনেকে বলল এটা বলতে অসুবিধে

 

হবে, লোকে বলতে পারবে না। আমি বললাম আস্তে আস্তে ঠিক

 

সয়ে যাবে। এখন অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার এটাই আমাদের

 

ফিলোজফি। We are alternative. Alternative of what?

 

Alternative of everything you practice, I am

 

alternative of that. মুখ দিয়ে খেতে হয় বলে মুখ দিয়ে খাই

 

এমন নয়। আমার খাদ্যাভ্যাস, বসন, ব্যবহার, আমার থিয়েটার,

 

আমার চিন্তা-চেতনা,যাপন সবটাতেই আমরা‌‌‍ অল্টারনেটিভ।

 

তোমাদের মতোন নই এবং আমাদের একটা কোটেশন আছে যেটা

 

আমাদের টি-শার্টে লেখা থাকে ‘we are different’. আবার একই

 
 
 

প্রশ্ন কীসের ডিফারেন্ট? সবটাতে ডিফারেন্ট। সে তোমার ভালো

 

লাগতেও পারে, নাও লাগতে পারে। ফলে সেখান থেকেই

 

‘অল্টারনেটিভ’টা রাখা হয়। আর ‘লিভিং’ এইজন্য যে আমরা

 

লিভিং মেটেরিয়াল নিয়ে কাজ করি। পুরোনো ঘটনা নিয়ে কাজ

 

করতে চাই না। তবে মাঝে মধ্যে যে করতে হয় না তা নয়।

 

কিন্তু তার মধ্যে একটা কনটেম্পোরারি জায়গায় আমরা ঢুকে যাই।

 

সেটা যদি না ঢুকতে পারি তাহলে আর করিনা। ফলে সমস্তটার

 

সঙ্গে লিভিং ব্যাপারটা জড়িয়ে থাকে আমাদের। আর আমাদের

 

বেশিরভাগ কাজই হচ্ছে যখন যেমন চারপাশে ঘটছে তার উপর

 

নির্ভর করে। ফলে খুবই লিভিং থাকার চেষ্টা করি। আর থিয়েটার

 

বলতে আমি আদ্যন্ত থিয়েটার‌ই করতে চাই, সিনেমা করতে

 

চাইনা। আমি সিরিয়াল করতে চাইনা থিয়েটারে। আমি থিয়েটার‌ই

 

করতে চাই। থিয়েটারের একটা নিজস্ব ভাষা আছে।এখন যে

 

থিয়েটারগুলো দেখি সেগুলোকে আমি থিয়েটার বলে মনে করি না।

 

ভান: তারমানে আপনি শিল্পকে জ্যন্ত‌ই রাখতে চান?

 

প্রবীর গুহ: হ্যাঁ একেবারেই। থিয়েটার মানে একটা অন্যকিছু।

 

থিয়েটার মানে সিরিয়ালের নকল নয়। আমি একটা আদ্যন্ত থিয়েটার

 

করতে চাইছি। সেখান থেকেই থিয়েটারকে ভাবি। তাই নামটা

 

‘অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার’।

 
 
 

ভান: কার কার নাট্য আদর্শ আপনাকে প্রভাবিত করেছে?

 

প্রবীর গুহ: অনেকেরই। এভাবে কোন একক ব্যক্তির নাম বলতে

 

পারব না। আমার প্রথম জীবনে বিভাসদা, বিভাসদার কাছে অনেক

 

কিছু শিখেছি, জেনেছি, বুঝেছি। পরবর্তী জীবনে বাদলদা ,বাদলদার

 

কাজ দেখেছি। মাস তিনেক কাজ করেছি বাদলদার সাথে। তার

 

থেকেও খানিকটা জিনিস তৈরি হয়েছে। পরবর্তীতে গ্রোটস্কির সঙ্গে

 

লম্বা সময় কাজ করেছি। পিটার ব্রুকের সঙ্গে কাজ করেছি।

 

এইসব লোকের সঙ্গে কাজ করার পরে আমার যে ধারনাটা বদ্ধ

 

হল সেটা হলো এই ভাবে গুরু খুঁজে লাভ নেই বা কাউকে নকল

 

করে লাভ নেই। যদি বল এই গুরুদের থেকে আমি কি শিখলাম?

 

তাহলে এইটা বলবো যে, তোমার ভাত- তোমাকে ধান ফলাতে

 

হবে, চাল তৈরি করতে হবে, চাল সিদ্ধ করতে হবে, নুন জোগাড়

 

করতে হবে, ভাত মাখতে হবে, খেতে হবে। সেটা তোমার ব্যাপার।

 

এটি আমার মূল শিক্ষা। Then I came back from

 

everything and I started looking back to my tradition.

 

আমার ভারতীয় যে ঐতিহ্য, বাংলার যে ঐতিহ্য আমি সেগুলোর

 

দিকে তাকাতে শুরু করলাম। সে গুলোকে আবার বোঝার চেষ্টা

 

করতে শুরু করলাম এবং এখনো তাই করে যাচ্ছি। ফলে যদি

 

সত্যিকারের গুরু বলতে হয় কাউকে, যে কার আদর্শ মেনে চলছি,

 

তাহলে বলব আমার গুরু হলো আমার ট্রাডিশন।

 
 
 

ভান: এই পশ্চিমবাংলায় অল্টারনেটিভ স্পেস থিয়েটারের কি কোন

 

নির্দিষ্ট রূপ হতে পারে?

 

প্রবীর গুহ: দেখো এটা একটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার তো, আমাদের

 

যে কথাবার্তাগুলো হচ্ছে ধ্যান-ধারণাগুলো হচ্ছে ইদানিং, এর আগে

 

কেউ এইসব নিয়ে ভাবেনি। এটা বাদলদাই প্রথম একটু ভাবনা

 

শুরু করেছিলেন। তারপরে আমরা খানিকটা করি। বাদলদা কিন্তু

 

কনফাইন্ডলি রয়ে গেলেন, ছোট ছোট হলের মধ্যেই করলেন, আর

 

কার্জন পার্কে বেরিয়ে এসে করেছিলেন। আমাদের ক্ষেত্রে একটু

 

অন্যরকম হলো আমরা প্রথমে একটা ছোট স্কুলঘরে করতাম।

 

তারপর স্কুলঘর থেকে বিতাড়িত হলাম আমরা। সরিয়ে দেওয়া

 

হলো ওখান থেকে। রাজনৈতিক কারণেই সরিয়ে দেওয়া হলো।

 

ভান: এটা কত সাল নাগাদ?

 

প্রবীর গুহ: ওই ধরো ৮৫-৮৬ সাল নাগাদ। মানে লড়াই চলছে।

 

লড়াই ৭৭ সাল থেকেই চলছে। ফাইনালি ওইখানে কুইট করতে হলো

 

আমাদের। ফলে যখন লড়াই চলছে সেই সময়ই আমাদের বের করে

 

দেওয়া হচ্ছে। আমরা কোথায় যাব? কার্জন পার্কে দু’চারদিন করেছি

 

সেখানেও মুশকিল হচ্ছে। আর আমি কলকাতায় করতেও চাইনা

 

সেই অর্থে। ফলে কোনো কোনো বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে করছি।

 
 
 

ভান: বাংলা স্পেসিফিক বলছেন নাকি কলকাতাকেই বলছেন?

 

প্রবীর গুহ: না, কলকাতাকেই বলছি। আমি কলকাতায় করতে

 

চাইনা। কলকাতার যে বিরুদ্ধে তা না। কলকাতার একটা নিজস্ব

 

অরা আছে। আমরা যখন লিভিং থিয়েটার শুরু করি ৭৭ সালে

 

আমাদের অ্যানাউন্সমেন্ট ছিল যে আমরা পাঁচ বছর কলকাতায়

 

আসবো না। আমাদের নাটক দেখতে গেলে খড়দায় আসতে হবে

 

এবং ১০ বছর সেই আন্দোলন চালিয়েছিলাম আমরা। ফলে ওই

 

জেদটা ছিল আমাদের, এখনো আছে। তারপর যখন কোথাও করতে

 

পারছিনা, কার্জন পার্কেও যেতে চাইছি না, স্কুলও পাচ্ছিনা, তখন

 

নানান জায়গা বেছে নিচ্ছিলাম, কারো ছাদে, কারো বারান্দায়,

 

যেখানে যা পাচ্ছিলাম। আর স্পেসগুলোকে কনস্ট্যান্ট আমাদের

 

এক্সপ্লোর করতে হতো। নাহলে থিয়েটারের স্পেস তো কোনটাই নয়।

 

আমরা প্রচুর গ্রামে কাজ করে থাকি, করছি। গ্রামের ছোট ছোট

 

মুভমেন্টগুলোকে আমরা সহায়তা করি থিয়েটার দিয়ে। সেখানে

 

করতে গেলেও নানানভাবে স্পেস ভাঙতে হচ্ছিল। পরের দিকে এই

 

স্পেস ভাঙ্গাটা আমাদের একটা নেশার মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল। মানে

 

কেউ জানত না কী হবে, অ্যাক্টর‌ও জানতো না। স্পেস ভাঙ্গাটা

 

আমাদের রক্তের মধ্যে চলে এলো। ফলে পরের দিকে যে এই স্পেস

 

নিয়ে কথা হচ্ছে সেটা খুব একটা প্র্যাকটিক্যাল কারণের ওপর

 
 
 

দাঁড়িয়ে। হল পেলেও তার খরচ জোগাতে পারছে না। তখন সবাই

 

ভাবছে যে তাহলে চলো ইন্টিমেটে গিয়ে করি। অন্যভাবে করি।

 

ইন্টিমেটে করা মানে ইন্টিমেটের মত করে করা নয়। ইন্টিমেটে গিয়ে

 

প্রোসেনিয়ামটাই করা। যা প্রোসেনিয়ামে হয় তাই খালি ছোট স্কেলে

 

হবে। অল্প দর্শকের সামনে হবে।

 
 
 

ভান: মানে ইন্টিমেটে যেটা হচ্ছে সেটা প্রোসেনিয়ামের আদর্শকে

 

ভেঙ্গে হচ্ছে না।

 

প্রবীর গুহ: ইন্টিমেটের আদর্শকে ভেঙ্গে হচ্ছেনা, প্রোসেনিয়ামের

 

আদর্শেই চলছে। একটা সময় আমি নাট্য আকাদেমির মেম্বারও

 

ছিলাম। তখন আমরা যখন নাট্যমেলার আয়োজন করতাম,

 

পথনাটকের আয়োজনও করতাম। স্ট্রীট থিয়েটার হতো না সেখানে

 

প্রোসেনিয়াম থিয়েটারই হতো। মানে যারা যারা মূল নাটকে চান্স

 

পেত না শিশির মঞ্চে তারা তারা ওখানে এসে জুটত।

 
 
 

ভান: তার মানে এটা একটা সংকট?

 

প্রবীর গুহ: সংকট তো মগজের। আর ওটাকেই আমরা একটা

 

ইন্টিমেট থিয়েটার করছি বলে খাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো।

 

যেটা নয় আদৌ। ফলে ইন্টিমেট আন্দোলন যেটা সেটা আমাদের

 

এখানে সেভাবে গড়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে যখন রিপন স্ট্রিটের

 

স্পেসটা পাওয়া গেল তখন সুপ্রিয় মূলত ওটাকে খুব চেষ্টা করে

 
 
 

দাঁড় করানোর চেষ্টা করল। আমিও ছিলাম সঙ্গে। ও আরো অনেক

 

ছোট ছোট দলকে উদ্বুদ্ধ করল বা তারা আমাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ

 

হলো। অনেক দল এলো, কাজ করলো। তাদের মধ্যে কিছু কিছু

 

স্পার্ক দেখেছি যারা সত্যি সত্যি ইন্টিমেটটাকে করার চেষ্টা করছে।

 

ইন্টিমেটটাকে বুঝে করছে এবং তারা অন্য থিয়েটারে ইন্টারেস্টেড‌ও

 

না। এই যে গ্রুপটা এটা সংখ্যায় বড্ড নগণ্য। এদের চোখে দেখা

 

যায় না। আমি মনে করি ওইটাই ওদের সেফগার্ড। এরা যতদিন

 

এই ‘চোখে দেখা যায়না' অবস্থায় আছে ততদিন কিছু ঘটতে আরম্ভ

 

করবে, ঘটবে।

 
 
 

ভান: তাহলে আপনি কি বলছেন যে আলোয় এলে এরা বদলে

 

যাবে?

 

প্রবীর গুহ: হ্যাঁ বদলে যাবে। অন্যেরা ভীষণভাবে এটাকে নকল

 

করবে। দেখছ না দু’চারদিন দলে থেকেই বিশাল বড় ডিরেক্টর

 

মনে করছে নিজেদের। ঠেকানো যাচ্ছে না। যা যা শিখেছে

 

সেগুলোকে নিজের মত করে একটা ব্র্যান্ড নেম দিয়ে দিচ্ছে। এই

 

সমস্যাগুলো চারিদিকে হচ্ছে। ফলে স্পেস নিয়ে যে ভাবনা সেটা

 

এখনো আমাদের দেশে শুরু হয়নি সেভাবে। তবে কিছু কিছু লোক

 

যেমন আমি কল্লোলের নাম বলবো, কল্লোল কোথাও একটা স্পেস

 

নিয়ে খুব ভাবে। আমি ‌ঋতদীপদের‌ দেখেছি, ওরা খুব ভাবে।

 
 
 

সন্দীপদের দেখেছি ভাবতে। এরকম কিছু কিছু গ্রুপ আছে সবার

 

নাম হয়তো বলতে পারলাম না। এরকম কিছু কিছু গ্রুপ আছে

 

যারা সত্যিই স্পেস নিয়ে ভাবে এবং স্পেস নিয়ে কাজ করে। তারা

 

অন্য কোথাও যায় না। অন্য ভাবে কাজ করে না। আর একটা

 

কথা এর সঙ্গে বলা দরকার সেটা হচ্ছে যে, আমরা যখন বাইরে

 

আমন্ত্রিত হই তখন আমি যেই স্পেসে করতে চাইছিলাম সেই

 

স্পেসটা পেলাম না। একটা হলে ঢুকিয়ে দিল। তখন আমরা চেষ্টা

 

করি হলটাকে ভেঙেচুরে এর মধ্যে কীভাবে করা যায়। তার মানে

 

এটা হচ্ছে experimentation on space. আর আমি বলি যে

 

প্রোসেনিয়াম বা নন-প্রোসেনিয়াম আলাদা করে না দেখে সবটাই

 

স্পেস। এক এক রকম স্পেস এবং সেই স্পেসকে যদি ব্যবহার

 

করতে হয় তার মতো করেই ভেঙেচুরে ব্যবহার করা উচিত।

 
 
 

ভান: আজকে যে নন-প্রোসেনিয়াম স্পেসে হচ্ছে সেটা কি

 

প্রোসেনিয়াম ‘বনাম’ নাকি প্রসেনিয়াম ‘এবং’ নন-প্রোসেনিয়াম,-

 

কোন জায়গায় চলে গেছে বলে আপনার মনে হয়?

 

প্রবীর গুহ: দেখো, প্রোসেনিয়ামকে রবীন্দ্রনাথও পছন্দ করেননি,

 

আমিও করি না। কারণ প্রোসেনিয়ামে যেটা হয় সেটাতে এন্টারটেইন

 

করা যায়। প্রোসেনিয়ামের ফরমেটটাই হচ্ছে এন্টারটেইন করার

 

জন্য। কিন্তু প্রোসেনিয়াম ছেড়ে যখনই বেরিয়ে আসা হয় তখন

 
 
 

আর এন্টারটেইনমেন্ট থাকেনা। আমি উৎপলদার নাটক দেখেছি,

 

যখন স্টেজে করছে তখন ভীষণ এন্টারটেইনিং করছে। ‘দুঃস্বপ্নের

 

নগরী’ অব্দি। কিন্তু নেমে এসে তিনি যখন ‘দিনবদলের পালা’

 

করছেন সে ভয়ানক। একদম মনে হচ্ছে যে ছুটে চলে যাই।

 

ধরেনিই ওনাদেরকে।

 
 
 

ভান: যত কাছে আসছে তত বদলে যাচ্ছে।

 

প্রবীর গুহ: হ্যাঁ তত বদলে যাচ্ছে। লাইট, সেট, পোশাক ইত্যাদির

 

আভরণ ছাড়া যখনই হচ্ছে তার একটা অন্য জায়গা তৈরি হচ্ছে।

 

আমার যেটা ইদানীংকালে খুব মনে হচ্ছে, আমি রিহার্সাল দেখতে

 

খুব ভালোবাসি আজকাল, বিশেষ করে ফাইনাল রিহার্সাল যদি হয়।

 

আমি শোও দেখবো না। কারণ আমার মনে হয় রিহার্সালটা খুব

 

সত্যি। আর অভিনয় টা আমার কাছে খুব আর্টিফিসিয়াল মনে হয়।

 

ফলে ওই আর্টিফিসিয়ালিটি কোথাও ঢুকে যায়। সেই জন্য আমি

 

এটাকে লড়াই বলবো না, কারণ আমাদের এই বাংলার মানুষ এই

 

আড়াইশো বছর ধরে এই করতে করতে কোথাও ওটাকেও একটা

 

থিয়েটার বলে ধরে নিয়েছে। নিজেদের প্রাণের জায়গা বলে ধরে

 

নিয়েছে। এটাকে অস্বীকার করা যাবেও না, উচিতও না। বরং

 

ওটা যেমন আছে থাক, ওর মত করে থাক। পাশাপাশি যারা

 

অন্যরকমভাবে ভাবে তারা একটু অন্যরকম করে ভাবুক। কারোর

 
 
 

সাথে কারোর কোনো বিরোধ নেই। আমরা আপনাদের সম্মান

 

করছি, সম্মান দিয়ে কাজ করছি।

 

ভান: কোনরকম লড়াই বা ঝামেলা নেই?

 

প্রবীর গুহ: না, কিছু নেই। কোন ঝামেলা নেই।

 
 
 

ভান: অল্টারনেটিভ থিয়েটারের প্রস্তুতি কী রকম হওয়া উচিত বলে

 

আপনার মনে হয়?

 

প্রবীর গুহ: আমি অন্যদের কথা বলতে পারবোনা, আমি আমাদের

 

কথা বলতে পারি। আমর কীভাবে ভাবি। প্রথমত, আমরা কোনো

 

পূর্বলিখিত নাটক করি না। একটা নাটক লেখা হয়েছে, সেটা

 

ডিরেক্টর পড়ল, সবাই শুনল, সবাইকে চরিত্র ভাগ করে দিল- এই

 

রকম হয় না আমাদের। আমাদের যেটা হয় সেটা হলো একটা

 

আইডিয়া ভাবা হয়। এই আইডিয়া নিয়ে কাজ করব। তারপর

 

আমরা ক্যাম্পে চলে যাই। আমরা এখানে থাকি না তখন। পুরো

 

টিমটা মানে যারা অভিনয় করছেন, যিনি আলোতে থাকবেন, যিনি

 

মিউজিকে থাকবেন সবাইকে নিয়ে আমরা চলে যাই। কয়েকজন

 

বন্ধুবান্ধবও থাকতে পারে যারা আমাদের উপদেশ দেবেন, Fill up

 

the blanks করবেন আর কি। সেই রকম ভাবে আমরা ক্যাম্পে

 

চলে যাই। ক্যাম্পে গিয়ে আমাদের প্রচুর আলোচনা হয়, এক একটা

 
 
 

সাবজেক্ট নিয়ে কোন কোন স্কলার এসে কখনো কখনো বলেন।

 

কখনো কখনো এই পর্বটা আমরা এখানে বসেও করি। করার পরে

 

একটা পেকে গেলে আমরা ঢুকি ওখানটাতে। এবার এসব ছোট

 

ছোট করে ইম্প্রোভাইজ করা আরম্ভ হয়। সেই বিষয়টা ধরে ধরে।

 

সেই বিষয়টা ধরে একটা ইম্প্রোভাইজ হচ্ছে, অ্যানালিসিস হচ্ছে,

 

দেখা হচ্ছে, নতুন করে সাজেশন দেওয়া হচ্ছে। এইরকম করতে

 

করতে ডেভেলপ করা হয়। তিনি সেটা থেকে এবার বেছে বেছে

 

তার মেটেরিয়ালগুলো তৈরি করে একটা কোলাজ তৈরি করে

 

সাজাতে আরম্ভ করেন। তারপরে স্ক্রিপটিংয়ের কাজ আরম্ভ হয়।

 

যেভাবে মুভমেন্টগুলো তৈরি হল, ডেভেলপ করল, সিকুয়েন্স

 

ডেভেলপ করল, সেই অনুযায়ী কী কী ডায়লগ হতে পারে, ফরমেট

 

হতে পারে তা ঠিক করা হয়। সেখানে চেষ্টা করা হয় কোন

 

গতানুগতিক লেখা নয়, যত অ-গতানুগতিক হয়। মানে বেশি

 

লিরিক্যাল। খুব অ্যাবস্ট্রাক্ট। কারণ মুভমেন্টটাই তো অ্যাবস্ট্রাক্ট

 

হচ্ছে। তাই টেক্সট অ্যাবস্ট্রাক্ট হতে হবে। ‘এই মেরে তোর মুখ

 

ফাটিয়ে দেব’ এটা তখন চলে না সেখানে। তাইতো? ফলে অন্য

 

টেক্সট খুঁজতে হয় আমাদেরকে। আমরা বিশ্বাস করি যে যত লেস

 

টেক্সট থিয়েটারে মজাটা তত বেশি। গ্রোটস্কি একটা খুব ভালো

 

কথা বলেছিলেন যেখানে কথার শুরু সেখানে থিয়েটার শেষ,

 
 
 

যেখানে কথা শেষ সেখানে থিয়েটার শুরু। আমরা এটা খুব বিশ্বাস

 

করে চলি আর আমাদের ভারতীয় কনটেক্সটে কিছু কিছু কথা

 

বলতেই হয়, কিন্তু সেটাও চেষ্টা করি যতখানি কম সম্ভব। ফলে

 

এইটি আমাদের প্রসেস, এভাবে আস্তে আস্তে এগোই। তারপরে লাইট

 

ডিজাইনার যারা আছে তারা এর মধ্যেই থাকে, বলে এইরকম

 

লাইট করবো, মিউজিকে যে আছে সেও এরকম করতে করতে

 

একটা ফাইনাল রূপে আসে। আমাদের দলটা হচ্ছে সবথেকে

 

গণতান্ত্রিক। ১০০ শতাংশ গণতান্ত্রিক। এখানে কারো কোন মাতব্বরি

 

নেই, কারো কোন হায়ারার্কি নেই। যিনি মিউজিশিয়ান তিনি তার

 

মত মিউজিক করবেন। সেখানে ডিরেক্টরের দেখার কিছু নেই।

 

যারা ইম্প্রভাইজ করছে অ্যক্টররা তারা তাদের মতো করছে। যারা

 

লিখছেন তারাও তাদের নিজেদের মতো লিখছেন, জমা দিচ্ছেন।

 

তার থেকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। ফাইনালি যে ডিরেক্টর সে হয়তো

 

বেছে নিচ্ছে সেগুলো। তার কাজ হচ্ছে ওইটা। এর বেশি কিছু না।

 

আবার ডিরেক্টরও যখন কিছু করতে যাচ্ছেন সবার সম্মতি নিয়ে

 

যে এরকমভাবে হলে কেমন হয়। সবাই যদি বলে ঠিক আছে

 

তাহলে ঠিক আছে। কেউ যদি বলে, না – এই সিকুয়েন্সটা ঠিক

 

নেই তাহলে বাদ দিয়ে দাও সেটাকে। মানে এই জায়গাটা আমাদের

 

মধ্যে খুব খোলাখুলি থাকে। আমি মনে করি এটাই অল্টারনেটিভ

 

প্রসেস হওয়া উচিত।

 
 
 

ভান: নতুনদের যে কাজ দেখছেন তাতে কাকে এবং কেন আপনার

 

সম্ভাবনাময় বলে মনে হচ্ছে?

 

প্রবীর গুহ: এটাই সমস্যা বুঝলে। এইযে ঝট করে বলব আমার

 

কারো নাম মনে পড়ছে না। তারমানে এমন কোনো ইম্পর্টেন্ট কাজ

 

কিছু দেখিনি বলে মনে হচ্ছে। তবুও তার মধ্যেই আমার অবশ্য

 

আমি শুনেছি এখনো দেখিনি দেখব,

 

‘ইয়েস’ আর ‘অথ হিড়িম্বা কথা’ এই দুটো দেখব। আমি ‘আর্ট’

 

দেখেছি। ‘আর্ট’ দেখে মুগ্ধ আমি। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কাজ একটা।

 

আকাদেমিতে যেটা করেছিল। আমি প্রোসেনিয়ামে দেখবো না বলেছি

 

ওদের নাটক। এইটা খুব ভাল লেগেছিল আমার। তারপরে

 

ঋতদীপদের কাজটা ভালো লেগেছিল। ‘চেনা আধুলি’ খুব ভালো

 

লেগেছে। এরকম দু’তিনটে নাম মনে পড়ছে যাদের কাজ আমার

 

কাছে ইম্পর্ট্যান্ট বলে মনে হয়েছে। যারা অন্য ধরনের কাজ

 

করছে। আর প্রোসেনিয়ামের মধ্যে একটা কাজ দেখেছি আমার

 

ভালো লেগেছে খুব যেটা হচ্ছে অর্নর ‘মহাভারত ২’। আর

 

কল্লোলের ‘অন্ধাযুগ’। অসাধারণ লেগেছে কাজটা। মানে ওটা

 

রিমার্কেবল কাজ বলে মনে করেছি আমি।

 

ভান: অল্টারনেটিভ থিয়েটারের ভবিষ্যৎ চর্চা কী রকম হওয়া

 

উচিত? মানে কী তার ভবিষ্যৎ চর্চা?

 
 
 

প্রবীর গুহ: দেখ, আস্তে আস্তে আমরা যে পরিণতির দিকে যাচ্ছি,

 

এই যে আমাদের থিয়েটারের একটা চকচকে প্লাস্টার ছিল বাইরে

 

থেকে সেটা ক্ষয়ে ক্ষয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে চুর-চুর হয়ে পড়ে যাচ্ছে। যার

 

জন্য বড় বড় থিয়েটার দল ইন্টিমেটভাবে থিয়েটার করার চেষ্টা

 

করছে বা অন্য রকম ভাবে করার চেষ্টা করছে। যারা বিশ্বাসই

 

করতো না আমাদের, সারাজীবন ধরে গালমন্দ করেছে, তারা এখন

 

এই ফর্মে কাজ করছে, এটাই ভাবার চেষ্টা করছে। তাতে কেউ

 

কেউ সাকসেসফুল হচ্ছে, কেউ কেউ হচ্ছে না। কিন্তু চেষ্টাটা তাদের

 

আছে। এই চেষ্টাটার কারণটাই হচ্ছে যে সময়ের দাবি। সে তো

 

এমনি করছে না, সে করতে চায় না এটা। কিন্তু সময় তাকে

 

এমন জায়গায় ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে যে সে এটা করতে বাধ্য হচ্ছে।

 

এখন তো হলের খুব ক্রাইসিস। যে কয়েকটা হল আছে তার মধ্যে

 

সমস্ত গুলোই ওই ইয়েসম্যান যারা তারাই পায় আর কেউ পায়

 

না। তারাই পদক পায়, তারাই শো পায়, তারাই ওয়ার্কশপ পায়,

 

যা সুযোগ-সুবিধা এই কটা লোকের জন্যই। আর বাকি লোকরা

 

লোক নয় তাদের কাছে। ফলে তারা পরোয়াও করে না। তাদের

 

কয়েকটা শো দেওয়া, নাট্যমেলায় পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া, এসব

 

ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেই তারা খুব খুশি হয়ে থেকে যায়। ফলে

 

তাদের অসুবিধা হয় না কিছু। ফলে এইযে ক্রাইসিসটা এখান থেকে

 

লোকে একটা নতুন স্পেস খুঁজছে। অন্যরকমভাবে ভাবছে কী

 
 
 

করতে পারা যায়। সবাই যে অল্টারনেটিভ ভেবে আসছে তা নয়,

 

কিন্তু ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। যখনই একবার খোঁজ শুরু হয় তখন

 

নতুন নতুন রাস্তা আসতে আরম্ভ করে। কারণ unless you are

 

challenged you won’t try to find out a new way. এখন

 

তারা চ্যালেঞ্জড। ফলে সে কিন্তু নতুন রাস্তা খুঁজতে যাচ্ছে। এই

 

খোঁজাটা আস্তে আস্তে বাড়বে। আরো বাড়বে। এই খুঁজতে গিয়ে

 

কেউ কেউ মজা পেয়ে যাবে। সে তখন এইসবগুলো ফেলে দিয়ে

 

আবার ভেতরে ঢুকে যাবে। হয়তো আগামী দিনে এসে একটা নতুন

 

পথ বের করে নিয়ে আসবে। ফলে এই খোঁজটা আমার মনে হচ্ছে

 

আগামী দিনে অল্টারনেটিভ থিয়েটারকে আরো বৃহৎ রূপ দেবে।

 

আর একটা কথা হচ্ছে যে, এখন ইন্টারনেটের যুগ হয়ে গেছে তো

 

ফলে এখন চারপাশে কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে আমরা দেখতে

 

পাচ্ছি, জানতে পারছি আমরা। কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়ে দিল্লিতে,

 

বম্বেতে, কলকাতাতে দারুন ভাবে কাজ করছে। নতুন নতুন ভাবনা

 

নিয়ে কাজ করছে। শ্রাবস্তী ঘোষ একটা কাজ করেছিল ‘ন্যাপকিন’

 

বলে, অসাধারণ কাজ। আমি দেখেছিলাম। এরকম ছোট ছোট কাজ

 

বেরোচ্ছে নানান জায়গা থেকে। ফলে আমি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ মনে

 

করছি। আর ইন্টারনেটের কারণে আমরা তো বিদেশের কাজগুলো

 

দেখতে পাচ্ছি। এগুলো খুব উদ্বুদ্ধ করছে মানুষকে। আমার একটা

 

বই বের হচ্ছে তাতে একটা লেখা লিখেছি ‘দেশ-বিদেশের

 
 
 

প্রথাবহির্ভূত থিয়েটার’ । এখনো বেরোয়নি, বেরোবে। বইমেলায়

 

কতগুলো টেকনিক্যাল অসুবিধে হয়েছে আর কি। পয়লা বৈশাখের

 

মধ্যেই বেরোবে আশা করছি।

 

ভান: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 

( ভাণ ‘এর পক্ষে আলাপ চালিয়েছেন পার্থ হালদার )

 
 
 
 

 

ধারাবাহিক চর্চার অভিজ্ঞতা থেকে গড়ে উঠবে নতুন থিয়েটার' বললেন

কিশোর সেনগুপ্ত

 
 
 
 
 
 
 
 

আমরা যারা তথাকথিত মফঃস্বলে বসে থিয়েটারের কাজ করছি তাদের অধিকাংশেরই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক নাট্যশিক্ষা নেই। মানে কথাটা এই যে তারা প্রায় কেউই কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো নাট্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক নাট্যশিক্ষা নিয়ে দিগগজ্ হয়েছেন — এমনটা নয়। হ্যাঁ, দু-পাঁচজন এমন নিশ্চয়ই আছেন কিন্তু সবাই তা নন। তো যে সংখ্যাগুরু অংশ এইরকম নাটক না পড়ে আসা দলে পরেন তাদের নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ এই যে কোনো না কোনোভাবে নাটককে ভালোবেসে ফেলা। ঠিক যেমন সবকিছু জেনে বুঝে গুলে খেয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন এমন মানুষ বিরল। বরং, অন্তত আমাদের মতো সাধারণ নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যে মানুষেরা রাজনীতিতে নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছেন তাঁদের রাজনীতেতে যুক্ত হওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা, প্রথম ভালোবাসা, খোঁজ নিয়ে দেখলেই জানা যাবে, হঠাৎ করে কোনো না কোনো রাজনৈতিক সংঘটন (𝚑𝚊𝚙𝚙𝚎𝚗𝚒𝚗𝚐), তা সে যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন। থিয়েটারে আমাদের আসাটাও তাই। ক্লাসে অশোক মুখোপাধ্যায়ের 𝙰𝚛𝚖𝚜 𝚊𝚗𝚍 𝚝𝚑𝚎 𝙼𝚊𝚗 পড়ানো শুনতে শুনতে সেই কবে কোন নবীন বয়সে মনে এসেছিল এমনতর বাসনা ‘থিয়েটার করব’ — আজও সে করার কাজে লেগে থাকার সুযোগ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওই ‘করব’ বললেই তো আর করা হয়ে ওঠে না, কীভাবে করব তা শিখতে হয়, জানতে হয়। কীভাবে শিখব আমরা? আমাদের সামনে যে যে ইনফর্মাল, অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়গুলো ছিল শেখার তা মোটামুটি এইরকম — অনেক নাটক দেখা, নাটক পড়া, নাটক ও তার প্রায়োগিক দিক সম্পর্কিত বইপত্র পড়া, সুযোগ পেলে কাছে দূরে প্রতিষ্ঠিত নাট্যজনেদের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত বিভিন্ন নাট্য কর্মশালায় যোগ দেওয়া, এইসব। আজকের মতো নেট ব্যবস্থা তখনও আসেনি ফলে বিশ্বকে সহসা হাতের মুঠোয় আনার উপায় আমাদের শেখার দিনগুলোতে ছিল না। যদিও শেখার দিন তো ফুরোয় না। এখনো শিখছি। এবং হ্যাঁ, চলতি সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তির সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেই শিখছি। আর আমাদের এই শেখার পর্বে, এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষাটা পেয়েছি তা হল ‘চর্চা’। কী সদর, কী মফঃস্বল — চর্চাটাই ছিল নিজেদের তৈরি করার, মঞ্চোপযোগী করে তোলার অন্যতম উপায় এবং পদ্ধতি এবং ভীষণ উত্তেজনাপূর্ণ এক উদ্দীপনা যে এভাবেই গড়ে তুলতে হবে আমাদের নিজেদের আর সেকাজে সফল হলে তবেই আমরা পারব আমাদের থিয়েটারটাকে গড়ে নিতে। একথা বলতে দ্বিধা নেই আজ সে চর্চার কাজটা সদর মফঃস্বল সবজায়গাতেই নিম্নমুখী, বিশেষত সদরে। এই স্পর্ধিত উচ্চারণের ব্যাখ্যা পরে দেব।

 
 
 

আমরা সকলেই কমবেশি আমাদের থিয়েটারের উৎপত্তি ক্রমবিবর্তন — এককথায় ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমরা জানি কীভাবে কেমন করে ভারতীয় গণনাট্য থেকে শুরু করে বোর্ড থিয়েটার, গ্রুপ থিয়েটার, সৎ নাট্য, নবনাট্য, থার্ড থিয়েটার ইত্যাকার নানা অভিধায় আমরা আমাদের নাট্য চলাচলকে, নাট্য ইতিহাসকে গড়ে নিয়েছি। যদিও তেমন কোনো সর্বজনগ্রাহ্য আকরগ্রন্থ এই ইতিহাস নিয়ে লেখা হয়েছে এমনটা আমাদের জানা নেই। হতেও পারে এ আমাদের অজ্ঞতা। যে কথাটা বলতে চাইছি তা এইরকমঃ মোটামুটি গ্রুপ থিয়েটারের আদলে, ধাঁচায়, আদর্শে আমাদের অধিকাংশ দল পরিচালিত হয়। কী সেই আদর্শ? কী সেই পদ্ধতি? আমরা সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে থিয়েটার গড়ে তুলব। সেই সম্মিলিত কাজে সকলের সক্রিয় ভাবনা চিন্তা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। পরিচালক নিশ্চয়ই একজন থাকবেন কিন্তু তিনিই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি সব সিদ্ধান্ত একাই নিতে পারেন। শ্রদ্ধেয় শম্ভু মিত্র এইরকম কাজের ভাবনার সূত্রেইই 𝚌𝚘𝚕𝚕𝚎𝚌𝚝𝚒𝚟𝚎𝚕𝚢 এবং 𝚌𝚘𝚘𝚙𝚎𝚛𝚊𝚝𝚒𝚟𝚎𝚕𝚢 শব্দদুটি ব্যবহার করেছিলেন কুমার রায়কে লেখা এক চিঠিতে। থিয়েটারের সঙ্গে এই এতগুলো দিন বসত করে যা দেখছি এবং যা শুনছি তাতে জোরের সঙ্গে বলতে পারি মফঃস্বলে অধিকাংশ জায়গাতেই এই সম্মিলিত চর্চার রেওয়াজটা, অভ্যেসটা এখনও প্রবলভাবে বিদ্যমান। কল্যাণী, হালিশহর, বহরমপুর, বালুরঘাট, কৃষ্ণনগর, বগুলা, শান্তিপুর ইত্যাদি যে জায়গাগুলোর কথা কমবেশি জানি সেখানে থিয়েটার মানে রোজ সন্ধেয় সমবেত হওয়া। রোজই থিয়েটারকে ঘিরে কিছু না কিছু কাজ করা। সদরে, আজকের সদরে, তা কিন্তু নয়। সদরে সপ্তাহে তিন সন্ধে, দুই সন্ধে এমনকি শুধু শনি রবির সান্ধ্য দল। সদর থেকে দূরে আমরা মফঃস্বলে বসে যখন কাজ করছি তখন আমাদের অধিকাংশেরই চিন্তনে একটাই ভাবনা, একটাই লক্ষ্য যে আমাদের নিজস্ব এলাকার নাটকে আগ্রহ আছে বিশ্বাস আছে এমন মানুষদের নিয়ে প্রতিদিনের চর্চার মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুলে নির্মাণ করব নিজেদের নাট্য। সেটাই হচ্ছিল। এইভাবেই গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কাজ। সমাদৃত হয়েছে সেসব নাট্য দর্শক দরবারে — আমাদের গড়ে তোলা নাট্যটিই ‘তারকা’ তকমা পেয়েছে আর যে নাট্যদল নির্মাণ করেছেন এমন তারকা নাট্য সেই নাট্যদল হয়ে উঠেছে 𝚜𝚝𝚊𝚛. মানুষ হৈ হৈ করে সেসব কাজ দেখতে এসেছেন, ভিড় জমিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহের লবিতে, কোনো একজন বা দুজন তারকার টানে নয়, না কোনো বিজ্ঞাপনের বৈভবের মোহে এসেছেন, কেবল একটা ভালো নাটক দেখতে এসেছেন কেননা তাঁরা জেনেছেন কাজটি ভালো হয়েছে।

 
 
 

নিজেদেরই বেছে নেওয়া এই প্রকরণ, গৃহীত এই থিয়েটার কাঠামোটি, বা বলা যেতে পারে থিয়েটার প্যাটার্নটি থেকে প্রথম সরে এলো সদর। কিছু থিয়েটার দল, কয়েকজন থিয়েটারের মানুষ মনে করলেন এভাবে আর থিয়েটার করার যৌক্তিকতা নেই কোনো। তাঁরা মনে করলেন একটি নাট্য নির্মাণের জন্য যেমন আমরা যেমন সংগঠনের বাইরে থেকে আলোকচিত্রক, মঞ্চচিত্রক, সঙ্গীতকারদের আমন্ত্রণ জানাই — ঠিক তেমনই আমাদের প্রয়োজনে আমরা দলের বাইরে থেকেও অভিনেতা অভিনেত্রী নেব। একটা কথা এখানে বলে নিই — তাঁদের ভাবনাটা ভুল বা অযৌক্তিক এমন কোনো সিদ্ধান্ত টানা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা কেবল বাস্তব চিত্রটা বোঝার চেষ্টা করব। এখন এই যে সম্মিলিত গ্রুপ থিয়েটারিয় কাঠামো থেকে সরে এলাম আমরা সদরের অনেকেই তাতে দুটো জিনিস হল। এক — ইতিমধ্যেই তারকা হয়ে উঠেছেন, এবং সে তারকা হওয়ার নেপথ্য কারণ অনেকাংশেই কেবল থিয়েটার নয় অন্য আরও কিছু মাধ্যম বিশেষত টেলিভিশন ও ফিল্মও আছে, এমন কিছু অভিনেতা অভিনেত্রীকে আমরা একাধিক দলে অভিনয় করতে দেখছি। আর এই অন্যমাধ্যমে কাজ করার সুবাদে থিয়েটারের আপনজন যে জনপ্রিয় তারকা হয়ে ওঠেন এবং বেশ পরিচিতি পান তা তো নতুন নয়। শঙ্খ ঘোষের একটি লেখা ‘ইছামতীর মশা’ থেকে আমরা বেশ চিত্তাকর্ষক একটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করতে পারি। ১৯৭৫-এ প্রবল অনুরোধ এবং অনুনয়ের কোপে পড়ে শঙ্খ বাবুকে একবার বনগাঁয় এক কবি সম্মেলনে যেতে হয়েছিল। সঙ্গী অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, নবনীতা দেব সেন, ঢাকা থেকে আগত কবির এক বন্ধু নার্গিস আখতার, অজিতেশবাবুর স্ত্রী রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর তবলার মাস্টারমশাই এবং আয়োজকসংস্থার তরফে একজন নবীন যুবক। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর, পথের ধারে একটি চায়ের দোকান দেখে গাড়ি থামানো হয়েছে, উদ্দেশ্য চা পান। সবাই নেমেছেন। শঙ্খবাবু লিখছেন যে হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমাদের চারপাশে বেশ হৃষ্টপুষ্ট উৎসুক একটা ভিড়। এত রাতে এত লোক জমল কোথা থেকে? অজিতেশ বললেনঃ চলুন চলুন, উঠে পড়ি গাড়িতে। শঙ্খবাবু পরে মুগ্ধ স্বরে অজিতেশকে বলেছিলেনঃ “সত্যি, এইসব লোকেরাও আপনার নাটক দেখেছেন! গ্রুপ থিয়েটারের আজকাল তবে এতটা দৌড়?” উত্তরে অজিতেশ বলেছিলেনঃ “কী যে ভাবেন! এরা কি কেউ থিয়েটারের অজিতেশকে দেখছে? ওরা এসেছে ফিল্মের ভিলেইনকে দেখতে।” আর কোনো ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। দুই — দলের নিজস্ব নাট্যকর্মীদের বাইরে সমান্তরালভাবে আত্মপ্রকাশ করলেন বেশকিছু 𝚏𝚛𝚎𝚎𝚕𝚊𝚗𝚌𝚎 𝚝𝚑𝚎𝚊𝚝𝚛𝚎 𝚊𝚌𝚝𝚘𝚛𝚜.

 
 
 

আর এই নতুন ভাবনার নতুন থিয়েটার কাঠামো মান্যতা পেল ২০১৩ সালে প্রকাশিত ব্রাত্য বসু লিখিত কোম্পানি থিয়েটার বিষয়ক সন্দর্ভে। ব্রাত্য ওঁর রাজনৈতিক বীক্ষণ থেকে সময়কে বিচার করেছেন। বিবেচনায় এনেছেন কয়েকটা যুগ বা একটা গোটা সময়কালকে। ওঁর রাজনৈতিক সামাজিক বিশ্লেষণে শ্যামবাজারের বোর্ড থিয়েটার থেকে শুরু করে বিশ্বায়ন, বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্রের উন্মোচন, প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়া আবার একইসঙ্গে মাতৃভাষার প্রতি ধারাবাহিক অবজ্ঞা, অবহেলা — সবই এসেছে। সে আলোচনায় ব্রাত্য একজায়গায় লিখছেনঃ “(এসবের) কারণে রঙ্গমঞ্চে নতুন উত্তর ঔপনিবেশিক থিয়েটারের কর্মী চলে আসতে শুরু করল যারা অনিবার্যভাবেই ইতিহাস তথা ঐতিহ্যবিমুখ। তাদের অধিকাংশের কাছে থিয়েটার কর্মটি হয়ে উঠল আর পাঁচটা কাজের মতোই কাজ যা শিল্প নয়, নিরীক্ষা নয়, বিকল্প জীবনসাধনা নয়, আন্দোলন নয়, আদর্শ নয় — এটি একটি কর্ম, যা থেকে জীবিকার (একে অবলম্বন করে সিরিয়াল বা দল থেকে বা এদিক ওদিক সামান্য রোজগার) সন্ধান হলেও হতে পারে। বা নিছক সময়কাটানো এক 𝚒𝚗𝚟𝚘𝚕𝚟𝚎𝚖𝚎𝚗𝚝.” ব্রাত্যর এই অত্যন্ত মূল্যবান পর্যবেক্ষণটি পড়ে আমাদের মনে এসে যায় নিউইয়র্ক থেকে ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত মার্কিন সংস্কৃতি সমালোচক 𝙶𝚎𝚛𝚜𝚘𝚗 𝙻𝚎𝚐𝚖𝚊𝚗 এর 𝙻𝚘𝚟𝚎 𝚊𝚗𝚍 𝙳𝚎𝚊𝚝𝚑; 𝚊 𝚜𝚝𝚞𝚍𝚢 𝚒𝚗 𝙲𝚎𝚗𝚜𝚘𝚛𝚜𝚑𝚒𝚙 গ্রন্থে স্থান পাওয়া এক অনুরূপ পর্যবেক্ষণঃ

 

𝚃𝚑𝚎 𝙰𝚖𝚎𝚛𝚒𝚌𝚊𝚗 𝚐𝚎𝚗𝚎𝚛𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗 𝚋𝚘𝚛𝚗 𝚜𝚒𝚗𝚌𝚎 𝟷𝟿𝟹𝟶 𝚌𝚊𝚗𝚗𝚘𝚝 𝚛𝚎𝚊𝚍. 𝙸𝚝 𝚑𝚊𝚜 𝚗𝚘𝚝 𝚕𝚎𝚊𝚛𝚗𝚎𝚍, 𝚒𝚝 𝚠𝚒𝚕𝚕 𝚗𝚘𝚝 𝚕𝚎𝚊𝚛𝚗 𝚊𝚗𝚍 𝚒𝚝 𝚍𝚘𝚎𝚜 𝚗𝚘𝚝 𝚗𝚎𝚎𝚍 𝚝𝚘.

 

২৯ জুন ১৯৯১ এর দেশ পত্রিকায় সমরেশ মজুমদারের ‘বিনিসুতোয়’ পাঠান্তে বোঝা যায় যে মার্কিন মুলুকে ওই ১৯৯১ সালেও লেগম্যান বর্ণিত পর্যবেক্ষণটির তেমন কোনো অদলবদল হয়নি। ফিরে আসি আগের কথায়। ব্রাত্য উল্লেখিত এই ‘উত্তর ঔপনিবেশিক থিয়েটারের কর্মী’ এবং পূর্বে উল্লেখিত 𝚏𝚛𝚎𝚎𝚕𝚊𝚗𝚌𝚎 𝚊𝚌𝚝𝚘𝚛𝚜 শব্দগুচ্ছদুটি আমরা মনে রাখছি। মনে রাখছি এইকারণে যে প্রতিদিনের নাট্যচর্চার বাইরে এরা।

 

𝙴𝚛𝚗𝚜𝚝 𝙵𝚒𝚜𝚌𝚑𝚎𝚛 ওঁর 𝚃𝚑𝚎 𝙽𝚎𝚌𝚎𝚜𝚜𝚒𝚝𝚢 𝚘𝚏 𝙰𝚛𝚝 এ দেখিয়েছেন ‘ব্যক্তি আমি’ যখন ‘একা’ হয়ে উঠতে চায়, একাএকাই সমাজের মুখোমুখি দাঁড়াবার চেষ্টা করে — আসলেই তা রোমান্টিসিজম – এর প্রভাব।

 

𝙾𝚗𝚎 𝚘𝚏 𝚝𝚑𝚎 𝚋𝚊𝚜𝚒𝚌 𝚎𝚡𝚙𝚎𝚛𝚒𝚎𝚗𝚌𝚎𝚜 𝚘𝚏 𝚁𝚘𝚖𝚊𝚗𝚝𝚒𝚌𝚒𝚜𝚖 𝚠𝚊𝚜 𝚝𝚑𝚊𝚝 𝚘𝚏 𝚝𝚑𝚎 𝚒𝚗𝚍𝚒𝚟𝚒𝚍𝚞𝚊𝚕 𝚎𝚖𝚎𝚛𝚐𝚒𝚗𝚐 𝚊𝚕𝚘𝚗𝚎 𝚊𝚗𝚍 𝚒𝚗𝚌𝚘𝚖𝚙𝚕𝚎𝚝𝚎 𝚏𝚛𝚘𝚖 𝚝𝚑𝚎 𝚎𝚟𝚎𝚛-𝚒𝚗𝚌𝚛𝚎𝚊𝚜𝚒𝚗𝚐

 

𝚍𝚒𝚟𝚒𝚜𝚒𝚘𝚗 𝚘𝚏 𝚕𝚊𝚋𝚘𝚞𝚛 𝚊𝚗𝚍 𝚜𝚙𝚎𝚌𝚒𝚊𝚕𝚒𝚣𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗 𝚊𝚗𝚍 𝚝𝚑𝚎 𝚌𝚘𝚗𝚜𝚎𝚚𝚞𝚎𝚗𝚝 𝚏𝚛𝚊𝚐𝚖𝚎𝚗𝚝𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗 𝚘𝚏 𝚕𝚒𝚏𝚎. 𝚄𝚗𝚍𝚎𝚛 𝚝𝚑𝚎 𝚘𝚕𝚍 𝚘𝚛𝚍𝚎𝚛, 𝚊 𝚖𝚊𝚗’𝚜 𝚛𝚊𝚗𝚔 𝚑𝚊𝚍 𝚋𝚎𝚎𝚗 𝚊 𝚔𝚒𝚗𝚍 𝚘𝚏 𝚒𝚖𝚝𝚎𝚛𝚖𝚎𝚍𝚒𝚊𝚛𝚢 𝚒𝚗 𝚑𝚒𝚜 𝚛𝚎𝚕𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗𝚜 𝚠𝚒𝚝𝚑 𝚘𝚝𝚑𝚎𝚛 𝚖𝚎𝚗 𝚊𝚗𝚍 𝚜𝚘𝚌𝚒𝚎𝚝𝚢 𝚊𝚝 𝚕𝚊𝚛𝚐𝚎. 𝙸𝚗 𝚝𝚑𝚎 𝚌𝚊𝚙𝚒𝚝𝚊𝚕𝚒𝚜𝚝 𝚠𝚘𝚛𝚕𝚍 𝚝𝚑𝚎 𝚒𝚗𝚍𝚒𝚟𝚒𝚍𝚞𝚊𝚕 𝚏𝚊𝚌𝚎𝚍 𝚜𝚘𝚌𝚒𝚎𝚝𝚢 𝚊𝚕𝚘𝚗𝚎, 𝚠𝚒𝚝𝚑𝚘𝚞𝚝 𝚊𝚗 𝚒𝚗𝚝𝚎𝚛𝚖𝚎𝚍𝚒𝚊𝚛𝚢, 𝚊𝚜 𝚊 𝚜𝚝𝚛𝚊𝚗𝚐𝚎𝚛 𝚊𝚖𝚘𝚗𝚐 𝚜𝚝𝚛𝚊𝚗𝚐𝚎𝚛𝚜, 𝚊𝚜 𝚊 𝚜𝚒𝚗𝚐𝚕𝚎 ‘𝙸’ 𝚘𝚙𝚙𝚘𝚜𝚎𝚍 𝚝𝚘 𝚝𝚑𝚎 𝚒𝚖𝚖𝚎𝚗𝚜𝚎 ‘𝚗𝚘𝚝-𝙸’. 𝚃𝚑𝚒𝚜 𝚜𝚒𝚝𝚞𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗 𝚜𝚝𝚒𝚖𝚞𝚕𝚊𝚝𝚎𝚍 𝚙𝚘𝚠𝚎𝚛𝚏𝚞𝚕 𝚜𝚎𝚕𝚏 𝚊𝚠𝚊𝚛𝚎𝚗𝚎𝚜𝚜 𝚊𝚗𝚍 𝚙𝚛𝚘𝚞𝚍 𝚜𝚞𝚋𝚓𝚎𝚌𝚝𝚒𝚟𝚒𝚜𝚖, 𝚋𝚞𝚝 𝚊𝚕𝚜𝚘 𝚊 𝚜𝚎𝚗𝚜𝚎 𝚘𝚏 𝚋𝚎𝚠𝚒𝚕𝚍𝚎𝚛𝚖𝚎𝚗𝚝 𝚊𝚗𝚍 𝚊𝚋𝚊𝚗𝚍𝚘𝚗. 𝙸𝚝 𝚎𝚗𝚌𝚘𝚞𝚛𝚊𝚐𝚎𝚍 𝚝𝚑𝚎 𝙽𝚎𝚙𝚘𝚕𝚎𝚘𝚗𝚒𝚌 ‘𝙸’ 𝚊𝚗𝚍 𝚊𝚝 𝚝𝚑𝚎 𝚜𝚊𝚖𝚎 𝚝𝚒𝚖𝚎 𝚊𝚗 ‘𝙸’ 𝚠𝚑𝚒𝚖𝚙𝚎𝚛𝚒𝚗𝚐 𝚊𝚝 𝚝𝚑𝚎 𝚏𝚎𝚎𝚝 𝚘𝚏 𝚑𝚘𝚕𝚢 𝚎𝚏𝚏𝚒𝚐𝚒𝚎𝚜, 𝚊𝚗 ‘𝙸’ 𝚛𝚎𝚊𝚍𝚢 𝚝𝚘 𝚌𝚘𝚗𝚚𝚞𝚎𝚛 𝚝𝚑𝚎 𝚠𝚘𝚛𝚕𝚍 𝚢𝚎𝚝 𝚘𝚟𝚎𝚛𝚌𝚘𝚖𝚎 𝚋𝚢 𝚝𝚑𝚎 𝚝𝚎𝚛𝚛𝚘𝚛 𝚘𝚏 𝚕𝚘𝚗𝚕𝚒𝚗𝚎𝚜𝚜. 𝚃𝚑𝚎 𝚠𝚛𝚒𝚝𝚎𝚛’𝚜 𝚊𝚗𝚍 𝚊𝚛𝚝𝚒𝚜𝚝’𝚜 ‘𝙸’, 𝚒𝚜𝚘𝚕𝚊𝚝𝚎𝚍 𝚊𝚗𝚍 𝚝𝚞𝚛𝚗𝚎𝚍 𝚋𝚊𝚌𝚔 𝚞𝚙𝚘𝚗 𝚒𝚝𝚜𝚎𝚕𝚏, 𝚜𝚝𝚛𝚞𝚐𝚐𝚕𝚒𝚗𝚐 𝚏𝚘𝚛 𝚎𝚡𝚒𝚜𝚝𝚎𝚗𝚌𝚎 𝚋𝚢 𝚜𝚎𝚕𝚕𝚒𝚗𝚐 𝚒𝚝𝚜𝚎𝚕𝚏 𝚒𝚗 𝚝𝚑𝚎 𝚖𝚊𝚛𝚔𝚎𝚝-𝚙𝚕𝚊𝚌𝚎, 𝚢𝚎𝚝 𝚌𝚑𝚊𝚕𝚕𝚎𝚗𝚐𝚒𝚗𝚐 𝚝𝚑𝚎 𝚋𝚘𝚞𝚛𝚐𝚎𝚘𝚒𝚜 𝚠𝚘𝚛𝚕𝚍 𝚊𝚜 𝚊 ‘𝚐𝚎𝚗𝚒𝚞𝚜’, 𝚍𝚛𝚎𝚊𝚖𝚎𝚍 𝚘𝚏 𝚊 𝚕𝚘𝚜𝚝 𝚞𝚗𝚒𝚝𝚢 𝚊𝚗𝚍 𝚢𝚎𝚊𝚛𝚗𝚎𝚍 𝚏𝚘𝚛 𝚊 𝚌𝚘𝚕𝚕𝚎𝚌𝚝𝚒𝚟𝚎 𝚒𝚖𝚊𝚐𝚒𝚗𝚊𝚝𝚒𝚟𝚎𝚕𝚢 𝚙𝚛𝚘𝚓𝚎𝚌𝚝𝚎𝚍 𝚎𝚒𝚝𝚑𝚎𝚛 𝚒𝚗𝚝𝚘 𝚝𝚑𝚎 𝚙𝚊𝚜𝚝 𝚘𝚛 𝚒𝚗𝚝𝚘 𝚝𝚑𝚎 𝚏𝚞𝚝𝚞𝚛𝚎. 𝚃𝚑𝚎 𝚍𝚒𝚊𝚕𝚎𝚌𝚝𝚒𝚌 𝚝𝚛𝚒𝚊𝚍 – 𝚝𝚑𝚎𝚜𝚒𝚜 (𝚞𝚗𝚒𝚝𝚢 𝚘𝚏 𝚘𝚛𝚒𝚐𝚒𝚗), 𝚊𝚗𝚝𝚒𝚝𝚑𝚎𝚜𝚒𝚜 (𝚊𝚕𝚒𝚎𝚗𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗, 𝚒𝚜𝚘𝚕𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗, 𝚏𝚛𝚊𝚐𝚖𝚎𝚗𝚝𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗), 𝚊𝚗𝚍 𝚜𝚢𝚗𝚝𝚑𝚎𝚜𝚒𝚜 (𝚛𝚎𝚖𝚘𝚟𝚊𝚕 𝚘𝚏 𝚌𝚘𝚗𝚝𝚛𝚊𝚍𝚒𝚌𝚝𝚒𝚘𝚗𝚜, 𝚛𝚎𝚌𝚘𝚗𝚌𝚒𝚕𝚒𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗 𝚠𝚒𝚝𝚑 𝚛𝚎𝚊𝚕𝚒𝚝𝚢, 𝚒𝚍𝚎𝚗𝚝𝚒𝚝𝚢 𝚘𝚏 𝚜𝚞𝚋𝚓𝚎𝚌𝚝 𝚊𝚗𝚍 𝚘𝚋𝚓𝚎𝚌𝚝, 𝚙𝚊𝚛𝚊𝚍𝚒𝚜𝚎 𝚛𝚎𝚐𝚊𝚒𝚗𝚎𝚍) – 𝚠𝚊𝚜 𝚝𝚑𝚎 𝚟𝚎𝚛𝚢 𝚌𝚘𝚛𝚎 𝚘𝚏 𝚛𝚘𝚖𝚊𝚗𝚝𝚒𝚌𝚒𝚜𝚖.

 
 
 
 
 

আর এই রুপান্তরে ওদের সহায়ক হয়ে উঠেছে এবং উঠছে সদর। একটা-দু’টো উদাহরণ দিলে হয়ত আরেকটু পরিষ্কার হতে পারে বিষয়টা। মফঃস্বলের একটি নাট্যদলের সাম্প্রতিক একটি কাজ দেখে সে প্রযোজনার একজন অভিনেত্রীকে সদরের একটি দলের পরিচালকের ভীষণ ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে ওই অভিনেত্রীটির কাজ, তাঁর অভিনয়। তো সদরের ওই পরিচালক ভদ্রলোক অভিনেত্রীটিকে প্রস্তাব দিলেন “আমাদের আগামী প্রযোজনায় আপনাকে দরকার।” মফঃস্বলের মাটিতে লালিত হওয়া, বেড়ে ওঠা, মোটামুটি আড়াইবছর মফঃস্বলের ওই দলটিতে রোজ থিয়েটার চর্চার মাধ্যমে নিজেকে কিঞ্চিৎ তৈরি করতে পারা, একটা থিয়েটারিয় শৃঙ্খলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া এবং অবশেষে কোনো একটি নাটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া সেই অভিনেত্রী ঈষৎ কুণ্ঠিত। কী করে পারবেন ট্রেনে বাসে মেট্রোয় সদরে যাতায়াত করে, যেখানে থাকেন সেখানকার সামান্য রোজগারের বেসরকারি চাকরি সামলে? ইচ্ছে যে হচ্ছে না তা নয়, সদর বলে কথা। কিন্তু থিয়েটার তো। তার দাবী, তার শৃঙ্খলা — সে তো ভয়ানক, ভীষণ। ভরসা দিলেন সদরের পরিচালকঃ “কোনো চিন্তা নেই। আমরা কেবল শনি রবি রিহার্সাল দেব। তাতেই হয়ে যাবে”।

 
 
 

আমায় মার্জনা করবেন। আমাদের কথাগুলো রূঢ় লাগতে পারে, মনে হতে পারে আত্মম্ভরী, এমনকী বিদ্বেষপূর্ণ মনে হলেও আমরা নাচার কেননা চিত্রটা এইরকমই। আগেই বলেছি সদরে ওই শনি, রবি বা সপ্তাহে তিনদিনের দল, মফঃস্বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা রোজ, সপ্তাহান্তে কখনও কখনও একটা গোটা দিন এমনকি কিছু ক্ষেত্রে গোটা রাতও। এবং সেটা কেবল শো এর দিন এগিয়ে এলে বিশেষ দিনরাতের মহলা নয়। আমরা কয়েকটি দলের কথা জানি যারা নিজেদের কর্মীদের জন্য নানাধরনের অভিনয় শিক্ষা কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকেন টানা ৪৮ ঘন্টা বা তারও বেশি সময়ের জন্য। এবং তা হয় বাধ্যতামূলকভাবে আবাসিক সঙ্গে সেল ফোন না রেখে। আজকের দিনে একজন মানুষ ৪৮ ঘন্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন তার স্মার্টফোনটিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমা রেখে — এমন ভাবনা বিস্ময়কর হলেও কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব। আর সে যাপন-অভিজ্ঞতার মাধুরী যে কী অনাবিল আনন্দের তা অনভিজ্ঞদের বোঝানো একরকম দুঃসাধ্য। এই যে একসঙ্গে কাজ, একসঙ্গে থেকে খেয়ে হাসি ঠাট্টা গল্পগাছা করতে করতে একটা সৃষ্টির কাজে লেগে থাকা — এটাই তো 𝚌𝚘𝚕𝚕𝚎𝚌𝚝𝚒𝚟𝚎 𝚊𝚌𝚝𝚒𝚟𝚒𝚝𝚢. প্রতিদিন নাট্যচর্চা করে নিজেকে খানিকটা তৈরি করে দর্শকদের সামনে বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করতে পারা সে-অভিনেতাকে তাঁর রোজের অভ্যেস, রোজের চর্চা থেকে উপড়ে ফেলে একটা নতুন পরিবেশে সেট করে চটজলদি নিজেদের অভিপ্রায় পূরণ — এই কি ছিল আমাদের থিয়েটারের উদ্দেশ্য? সপ্তাহান্তিক সান্ধ্য দল, সে দলের কোনো প্রযোজনা, হলেও বা বেশ উচ্চমানের, তাতে একজন দুজন তারকা আর এপাশ ওপাশ থেকে কিছু অভিনেতা অভিনেত্রী যোগার করে একটি নাটক নামিয়ে ফেলা — এইটুকুই ছিল কি আমাদের লক্ষ্য? নিজেদের কোনো রেপার্টারি নেই, কোনো অঁসম্বল গঠনের তাগিদ নেই কেবল ৭ বা ৯ বা ১১ জনের একটি নিবন্ধীকৃত দল থাকলেই হল? কেমন হতে পারে এ জাতীয় নাট্য নির্মাণ পদ্ধতি? ভারতীয় থিয়েটারে ইতিহাস তৈরি করেছেন এমন একটি দলের সাম্প্রতিক একটি নাটকে, এই যে একটু আগে বললাম, সেইরকমভাবেই মফঃস্বলের কোনো একজন অভিনেত্রী আমন্ত্রণ পান অভিনয় করার। নাট্যটি নির্মিত হয় এবং উপুর্যুপরি সেই নাট্যের বেশ কয়েকটি অভিনয়ও মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু ওই অভিনেত্রীর কাছ থেকে যা জানতে পারি তা শোচনীয় এবং ভয়ানকও। শুনি একবারের জন্যও গোটা নাটকটির টানা কোনো মহলা হতে পারেনি। বিশ্বাস করুন ভুল শুনিনি, একবারও টানা কোনো মহলা, এমনকি আলো সঙ্গীতসহ কোনো একটানা টেকনিক্যাল মহলা — না, হয়নি। যার যখন সময় হয়েছে এসেছেন, নিজেদের পার্টটুকু করেছেন, তারপর মহলাকক্ষ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অর্থাৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল এই যে এজাতীয় নাট্যদলগুলো রেপার্টারি গ্র্যান্টের অন্তর্ভূক্ত হলেও সেখানে একটা অঁসম্বল গড়ে তোলার কোনো সুযোগই বর্তমানে নেই।

 
 
 

আমরা তো জানি যে, মার্কিন নাটকের ভাবনা ও বিষয়বস্তুর অভিমুখ বদলে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে সে দেশের তিন যুবক — হ্যারল্ড ক্লারম্যান, চেরিল ত্রুফোর্ড এবং লী স্ট্রিসবার্গ ১৯৩১ সালে ‘গ্রুপ থিয়েটার’ নামে একটি নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন। সস্তা, চটুল নাট্য বিষয়বস্তুর বিপরীতে তাঁরা এমন আধারের খোঁজে প্রবৃত্ত হলেন যা সেইসময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ হয়। রুশ নাট্যব্যক্তিত্ব কনস্তানতিন স্তানিস্লাভস্কি প্রণীত মেথড অ্যাক্টিং ছিল ওঁদের অবলম্বন এবং এই ‘গ্রুপ থিয়েটার’ নামের দলটি তার দশবছরের সময়কালে সাফল্যের সঙ্গে মোট ২২ টি প্রযোজনা নির্মাণ করে সত্যিসত্যিই আমেরিকান নাট্যচর্চায় এক নতুন ধারার আবির্ভাব ঘটায়। পরেরবছরই অর্থাৎ, ১৯৩২-এ উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে উদ্বোধন হয় ‘গ্রুপ থিয়েটার’ নামে এক নাট্যশালার। সঙ্গে সঙ্গে না হলেও কয়েকবছর পর ১৯৩৯ থেকে তিনটি অ্যামেচার নাট্যগোষ্ঠী ‘গ্রুপ থিয়েটার’ নামেই ওই প্রেক্ষাগৃহে তাঁদের নিজস্ব নাটক মঞ্চস্থ করতে শুরু করে। ১৯৩৩ সালে আধুনিক, পরীক্ষামূলক, অবাণিজ্যিক নাটক মঞ্চস্থ করার উদ্দেশ্য নিয়ে লন্ডনে ‘গ্রুপ থিয়েটার’ নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। রুপার্ট ডুন নামের একজন নাট্য নির্দেশক সেখানকার বেশিরভাগ নাটকের নির্দেশক ছিলেন। যথাসম্ভব নিরাভরণ মঞ্চে স্বল্প প্রপস্ ব্যবহার করে নাট্য নির্মাণ ছিল তাঁর বিশিষ্টতা। আমাদের দেশে ১৯৪৪ সালে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের নবান্ন প্রযোজনার মধ্য দিয়ে বাংলা থিয়েটার এক নতুন দিশা, এক নতুন বাঁকের সন্ধান পায়। নবান্ন-র ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিলঃ

 

“বাঙলার নাট্যশালাগুলো দর্শকদের সত্যিকার চাহিদা মেটাতে পারছে না, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্দ্বন্দ্বের ঘা খেয়ে খেয়ে অসন্তোষে বিষিয়ে উঠেছে মানুষের মন, এই সব সমস্যার সম্মুখীন হয়েই গণনাট্য আন্দোলন নতুন সত্তায় সম্পদশালী হয়ে গড়ে উঠতে প্রয়াস পেলো। সেদিক দিয়ে এই আবির্ভাব ঐতিহাসিক।”

 

যদিও কিছুকাল পরে মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিজন ভট্টাচার্য, গঙ্গাপদ বসু, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র প্রমুখ মানুষেরা গণনাট্য সংঘ থেকে বেরিয়ে এসে প্রথমে ‘অশোক মজুমদার ও সম্প্রদায়’ এবং পরবর্তীতে ‘বহুরূপী’ নামে নতুন একটি নাট্যদল তৈরির প্রয়াস পান। বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে প্রথম সংঘ নাট্য হিসেবে, গ্রুপ থিয়েটার হিসেবে ‘বহুরূপী’কেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি শব্দযুগল 𝙶𝚛𝚘𝚞𝚙 𝚃𝚑𝚎𝚊𝚝𝚛𝚎 ই প্রচলিত হয়ে গেল নবনাট্যের এই ধারাকে চিহ্নিত করতে। এর নেপথ্যে মার্কিন কি ইংরেজ মুলুকে প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ থিয়েটারের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ছিল কিনা নিশ্চিত জানি না। তবে এটা স্পষ্ট যে আমাদের সংঘ নাট্য বা গ্রুপ থিয়েটারের লক্ষ্যের সঙ্গে নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ থিয়েটারের লক্ষ্যের খুব একটা পার্থক্য ছিল না। শ্রদ্ধেয় নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের একটি বক্তৃতা শোনার সুযোগ হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। সেখানে শ্রী মজুমদার জানিয়েছিলেন যে নিউইয়র্কের গ্রুপ থিয়েটারের উদ্দেশ্য কী ছিল তা একজন সমালোচক বর্ণনা করেছেন এইভাবেঃ

 

𝚃𝚑𝚎𝚢 𝚌𝚘𝚗𝚌𝚎𝚒𝚟𝚎𝚍 𝚃𝚑𝚎 𝙶𝚛𝚘𝚞𝚙 𝚃𝚑𝚎𝚊𝚝𝚛𝚎 𝚊𝚜 𝚊 𝚛𝚎𝚜𝚙𝚘𝚗𝚜𝚎 𝚝𝚘 𝚠𝚑𝚊𝚝 𝚝𝚑𝚎𝚢 𝚜𝚊𝚠 𝚊𝚜 𝚝𝚑𝚎 𝚘𝚕𝚍𝚏𝚊𝚜𝚑𝚒𝚘𝚗𝚎𝚍 𝚕𝚒𝚐𝚑𝚝 𝚎𝚗𝚝𝚎𝚛𝚝𝚊𝚒𝚗𝚖𝚎𝚗𝚝 𝚝𝚑𝚊𝚝 𝚍𝚘𝚖𝚒𝚗𝚊𝚝𝚎𝚍 𝚝𝚑𝚎 𝚝𝚑𝚎𝚊𝚝𝚛𝚎 𝚘𝚏 𝚝𝚑𝚎 𝚕𝚊𝚝𝚎 𝟷𝟿𝟸𝟶’𝚜. 𝚃𝚑𝚎𝚒𝚛 𝚟𝚒𝚜𝚒𝚘𝚗 𝚠𝚊𝚜 𝚘𝚏 𝚊 𝚗𝚎𝚠 𝚝𝚑𝚎𝚊𝚝𝚛𝚎 𝚝𝚑𝚊𝚝 𝚠𝚘𝚞𝚕𝚍 𝚖𝚘𝚞𝚗𝚝 𝚘𝚛𝚒𝚐𝚒𝚗𝚊𝚕 𝙰𝚖𝚎𝚛𝚒𝚌𝚊𝚗 𝚙𝚕𝚊𝚢𝚜 𝚝𝚘 𝚖𝚒𝚛𝚛𝚘𝚛 – 𝚎𝚟𝚎𝚗 𝚌𝚑𝚊𝚗𝚐𝚎 – 𝚝𝚑𝚎 𝚕𝚒𝚏𝚎 𝚘𝚏 𝚝𝚑𝚎𝚒𝚛 𝚝𝚛𝚘𝚞𝚋𝚕𝚎𝚍 𝚝𝚒𝚖𝚎𝚜.

 
 
 

তাহলে ‘নবান্ন’-র ঘোষণাপত্র, বহুরূপীর ভাবনা, শম্ভু মিত্রের বলা 𝚌𝚘𝚕𝚕𝚎𝚌𝚝𝚒𝚟𝚎𝚕𝚢 এবং 𝚌𝚘-𝚘𝚙𝚎𝚛𝚊𝚝𝚒𝚟𝚎𝚕𝚢 শব্দদুটি — এই সব কিছুর সঙ্গে নিউইয়র্কে তিরিশের দশকে প্রতিষ্ঠিত 𝙶𝚛𝚘𝚞𝚙 𝚃𝚑𝚎𝚊𝚝𝚛𝚎 এর উদ্দেশ্য – ব্যাখ্যার নিরিখে বলা যায় যে ঐতিহাসিকভাবেই আমাদের থিয়েটার, কী সদরে, কী মফঃস্বলে, সম্মিলিত চর্চার পরম্পরায় বিশ্বাসী ছিল। আর সেই সূত্রে আমরা আমাদের আলোচনার উপসংহারে পুনরায় ফিরে আসব ওই ফ্রিল্যান্স অ্যাক্টরস্ এবং উত্তর ঔপনিবেশিক ইতিহাস বিমুখ থিয়েটার কর্মীদের প্রসঙ্গে। স্মর্তব্য যে ব্রাত্য বসুর ২০১৩ সালে প্রকাশিত কোম্পানি থিয়েটার বিষয়ক সন্দর্ভের পর কয়েকবছরের মধ্যেই ২০১৭ তেই আমাদের হাতে আসে তীর্থঙ্কর চন্দর লেখা একটি কাউন্টার ডিসকোর্স। সে গ্রন্থে তীর্থঙ্কর ব্রাত্যর ভাবনাগুলোকে খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন নানা তথ্য ও যুক্তির উপস্থাপনায়। তীর্থঙ্কর তাঁর ছাত্রাবস্থা থেকেই বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন। সংস্কৃতি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন মার্কসবাদী দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে। এমনকি আশির দশকের গোড়াতেই সেসময় শাসন ক্ষমতায় থাকা প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওঁর প্রবল মতাদর্শগত সংঘাত বেঁধেছে। কিন্তু মার্কসবাদী দর্শন থেকে তীর্থঙ্করের আস্থা টলেনি একটুও। সেই আস্থা, সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতেইই তিনি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে, দৃষ্টান্ত তুলে ধরে, একাধিক আকর গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে রচনা করেছেন তাঁর কাউন্টার ডিসকোর্স। একটা কথা স্পষ্ট করে বলে রাখা ভালো যে আমরা কোনো ভ্যালু জাজমেন্টের মধ্যে যাচ্ছি না। সে যোগ্যতাও আমাদের নেই। কে ঠিক, কোন ভাবনা সত্যি সত্যিই। জোরালো এবং অনিবার্য তা বলবে ‘সময়’। আমরা সাধারণ থিয়েটার কর্মীরা কেবল এইটুকুই পারি — আগামীদিনগুলোতে থিয়েটারকে সঙ্গী করে পথচলার ক্ষেত্রে অবলম্বন হিসেবে ব্রাত্য এবং তীর্থঙ্কর প্রণীত পরস্পরবিরোধী এই দুই বয়ানকে সবসময় মনে রাখতে। এমন নয় যে আমরা অনিবার্যভাবে কোনো একটি মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সেটিকেই অনুসরণ করতে চাইছি। আমরা আমাদের মতো করেই, আমাদের মাটিতে, আমাদের রসদকে কাজে লাগিয়েই আমাদের ভবিষ্যৎ থিয়েটার তৈরির কাজে লেগে থাকব এটা যেমন ঠিক, তেমনি সমসময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নাট্যজনের প্রস্তাবনা দুটিও আমরা ভুলে থাকব না। ইতিহাস বিমুখ উত্তর ঔপনিবেশিক থিয়েটার কর্মীবৃন্দের অস্তিত্ব এবং থিয়েটারের প্রাঙ্গণ রোমান্টিসিজমের প্রভাবে গড়ে ওঠা ফ্রিল্যান্স অ্যাক্টর্সদের দৃপ্ত আনাগোনা মেনে নিয়েও আমাদের, মানে মফঃস্বলের, মানে একঅর্থে কালিদাস উবাচ প্রাকৃতজনেদের চেষ্টা থাকবে নাট্যদলের প্রতিটি কর্মীর সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণে একটি এবং সবকটি নাট্য গড়ে তোলার। আর হ্যাঁ, এটাই আমাদের প্রত্যয় যে এইকাজে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে সদর নয় মফঃস্বল। আর সে কাজ একটু একটু করে হলেও যদি যথার্থ বাস্তবায়নের দিকে এগোয় তবে সোয়া দুশো বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসসমৃদ্ধ বাংলা থিয়েটার আরও কয়েকশ, এমনকি কয়েকহাজার হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে কোনো নো কোনো আঙ্গিকে। আর এইকারণেই আমাদের খোঁজ অন্য পরিসরের, অন্য স্পেসের। কেবল থিয়েটার অডিটোরিয়াম নয় — যে কোনো স্পেস। যেখানে আমরা আমাদের ধারাবাহিক চর্চার অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি করে নিতে পারব নিজেদের থিয়েটার। হতে পারে সে জায়গা কোনো মন্দির প্রাঙ্গণ, কোনো বাড়ির ছাদ, কোনো উঠোন, ফ্ল্যাটবাড়ির চাতাল বা কোনো ব্ল্যাক বক্স। চলতি উপায়ের পাশাপাশি এই বিকল্প সন্ধান এবং পারফরম্যান্স ছাড়া আগামীদিনের থিয়েটার, মানে সম্মিলিত চর্চার ফসল যে থিয়েটার — গ্রুপ থিয়েটারিয় কাঠামোয় নির্মিত আমাদের থিয়েটার দৌড়াতে পারবে এমনটা মনে হচ্ছে না। এছাড়া আমাদের মতো সাধারণ নাট্যকর্মীদের দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। উপায় নেই হতাশ হয়ে এর থেকে বেরিয়ে আসার, থিয়েটারকে আশ্রয় করে বাঁচতে চেয়েছে যে জন সে তো শেষদিন পর্যন্ত বলেই যাবে বলেই যাবে —

 
 
 

নাটক, ওই তোমার বাড়িয়ে দাও হাত, আমাকে উদ্ধার করো।

 

আমি যে ঘুমিয়ে পড়েছি, আমাকে তুমি জাগিয়ে দাও।

 

হারিয়ে গেছি অন্ধকারে, আমাকে নিয়ে চলো অন্তত একটি মোমের আলোর দিকে।

 

আমার উদ্যম গেছে, আমাকে লজ্জিত করো।

 

আমি অবশ, আমাকে তুলে ধরো।

 

আমি উদাস, আমাকে আঘাত করো।

 

ঔদাস্যেই যে আমি, আমাকে তুমি বিদীর্ণ করে দাও।

 

ভীত আমি, সাহস দাও।

 

ব্রাত্য আমি, দীক্ষা দাও।

 

মুখোশ আমি, আমাকে মানুষের মুখ তুমি ফিরিয়ে দাও।

 
 
 

* ফরাসী নাট্য পরিচালক আরিয়ান মুশকিনের বিশ্বনাট্য দিবসের সৈয়দ শামসুল হক অনুদিত বানী।

থিয়েটারের পথচলা প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ রায়

 
 
 
 
 

কোনো কোনো শুরুর একটা শুরু অবশ্যই থাকে, আবার কখনো কখনো এর ব্যতিক্রমও ঘটে। যেমন ধরুন,

 

আপনি যে পরিবেশে যে মফস্বল শহরে বড়ো হচ্ছেন সেখানে আপনার মানসিক খিদে পূরণ হচ্ছে না, আপনি কী

 

করবেন? বিকল্প আপনার কাছে খুব বেশি নেই, একটা বিকল্প- আপনার পছন্দের বিষয় থেকে সরে আসা, আর

 

আরেকটি হলো বড়ো করে কিছু ভাবা। এবার সমস্যা হলো বড়ো তো সীমাহীন, কোনো আকার বা আয়তনে তাকে

 

মাপা যায় না। অতএব উপায়? যখন আপনার হাত–পা বাঁধা অবস্থা আপনাকে একেবারে নিষ্ক্রিয় করে দেবে না,

 

মানে আপনার অস্তিত্বের বহিরঙ্গকে বেঁধে ফেললেও আপনার মস্তিষ্ককে ছুঁতেও পারবে না, আপনি তখন তৃতীয়

 

অথবা চতুর্থ অথবা অন্য কোনো বিকল্প নিশ্চয়ই খুঁজে নেবেন।

 
 
 

বিকল্প ১

 

একজন থিয়েটারের মানুষের প্রাথমিক পরিচয় সে মানুষ, কেননা থিয়েটারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার আগে অবশ্যই

 

তাকে বেশ কিছু মানব অস্তিত্বের স্তর পেরিয়ে আসতে হয়। ভারী ভারী করে না ভাবলেও এটুকু নিশ্চিত বলা যায়

 

যে থিয়েটারের সঙ্গে ঘর করবার পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অন্তত একটা বয়সকাল পর্যন্ত অনেক কিছুই

 

বুঝে নেওয়ার সময়টুকু তো দিতেই হয়। আমার থিয়েটার জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষণ মোটামুটি ষোলো বছর বয়সে।

 

তার আগে অবশ্যই বারো বছর বয়সেই পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের নাটক বিভাগে হাতেখড়ি পাড়ার

 

বয়ঃজ্যেষ্ঠ সংস্কৃতিপ্রেমী কাকা-দাদা-দিদিদের হাত ধরেই।

 
 
 

তবে ১৯৯৪ সালে শিলিগুড়ির গ্রুপ থিয়েটারগুলির সঙ্গে পরিচয় ও যুক্ত হওয়া বাংলা থিয়েটারের প্রতি আপাত

 

আকর্ষণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়াতে সাহায্য করলো। বলা ভালো গ্রুপ থিয়েটারের কার্যপ্রণালী, নিয়মকানুন, বিষয়

 

চয়ন ইত্যাদি সম্পর্কে আকর্ষণ ও সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করলো। শিলিগুড়ির কিছু দলে কিছু

 

প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হওয়া, কিছু বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ নাট্যব্যক্তিত্বদের সাহচর্য সমৃদ্ধ করলো নানান ভাবে। তবুও

 

…. একটা কিন্তু, অনেক কিছুই পরিপূর্ণ ভাবে না জানতে পারার আকুতি স্বস্তি দিচ্ছিল না কিছুতেই। শেকল ছেঁড়ার

 

একটা তাগিদ বাঁধন আলগা করলো অচিরেই।

 

শিলিগুড়ির বাইরে বাংলার রাজধানী শহর কলকাতায়, সপ্তাহে তিনদিন গণকৃষ্টির নাটকের কর্মশালা আর

 

তিনদিন রঙ্গকর্মীর মহলাকক্ষ। মাঝে সুযোগ পেলেই সল্টলেক মণিরথ। ঊষা গাঙ্গুলী, ব্রাত্য বসু, অমিতাভ দত্ত,

 

জহর দাস, শান্তনু বোস…. একে একে থিয়েটারের জ্ঞান উজাড় করে দেওয়ার মানুষেরা থিয়েটারকে চিনতে

 

শেখালেন নতুন করে। কি থিয়েটার, কেন থিয়েটার, কাদের থিয়েটার… নানান প্রশ্ন আর নানান উত্তর– একাধিক

 

দৃষ্টিকোণ, ততোধিক প্রয়োগ পদ্ধতি। অভিজ্ঞতা লাভের খিদে তাড়িয়ে নিয়ে গেল ভোপাল, পদ্মশ্রী হাবিব

 

তনভিরের রেপোরেটরিতে কাজ করবার সুযোগ, মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগ, ডঃ ওয়ামন কেন্দ্রে, এনএসডি

 

দিল্লির ভারত রঙ্গ মহোৎসব, দেবেন্দ্ররাজ অঙ্কুর, সঞ্জনা কাপুর, কানহাইলালজী, সাবিত্রী আম্মা– থিয়েটারের

 

নতুন নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে, শুধুই সমৃদ্ধ হওয়ার পালা।

 

সাল ২০০৫, কোনো এক শীতের সকালে হাবিব সাব আর হাবিব পত্নী মণিকা মিশ্রর সঙ্গে দীর্ঘ চার ঘণ্টার প্রাতরাশ

 

সেশন, বদলে দেওয়া অনেক কিছুই

 
 
 

১. শুধু থিয়েটারটাই করতে চাইলে রুটিরুজির জন্য বিকল্প পেশার সন্ধান।

 

২. থিয়েটারে ছাপ রেখে যেতে চাইলে নিজের অনুকূল পরিস্থিতি থেকে প্রাথমিকভাবে নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী

 

কাজ শুরু করা।

 
 
 

থিয়েটারের জন্য, বিকল্প পেশার সন্ধানে নিজ শহরে প্রত্যাবর্তন খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই।

 
 
 

বিকল্প ২

 
 
 

২০০৫ সালের প্রাতরাশ টেবিল পুনরায় শিলিগুড়িতে এনে দিল তো ঠিকই, কিন্তু দাঁড় করিয়ে দিল বেশ কিছু প্রশ্নের

 

সামনে…

 
 
 

১. থিয়েটার শুরু করবো কোথায়?

 

২. থিয়েটার করবো কাদের নিয়ে?

 

৩. থিয়েটারের দর্শক হবেন কারা?

 

৪. থিয়েটারের পৃষ্ঠপোষকই বা হবেন কে?

 
 
 

আরও একগুচ্ছ জিজ্ঞাসা, কিন্তু উত্তর সহজলভ্য নয়। ২০০৫ থেকে ২০১০ গুটি গুটি করে এদিক ওদিক ঘোরা

 

গেল ঠিকই, কিন্তু কাজ করবার ক্ষেত্র মজবুত হচ্ছিল না কিছুতেই। প্রশংসা, পিঠ চাপড়ানি, বাহবা, বদনাম,

 

পুরস্কার, তিরস্কার অনেক কিছুই ছিল আছে থাকবে …. কিন্তু আয়তন বা অচলায়তন দুইই ছিল অধরা।

 

তবুও তো কিছু একটা উপায় বের করতেই হয়, বিশেষ করে কর্তার ভূতের মতো থিয়েটারের ভূত প্রতিদিন মনে

 

করিয়ে দেয় "খাজনা দেব কিসে?" ২০১০ এ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন থিয়েটার যাত্রা পুনরায় পালে হাওয়া পেল

 

একদল শৈশবের হাত ধরে। প্রতি রোববারের থিয়েটারের ক্লাস ওদের আর আমার থিয়েটারের জ্ঞান চর্চার,

 

অর্জনের আর উজাড় করে দেওয়ার জায়গা হয়ে উঠলো। ক্রমশঃ গতি পেল একদল বয়ঃসন্ধির ছেলে মেয়েদের

 

থিয়েটারকে অবলম্বন করে পরিচিত সন্ধানের প্রচেষ্টা।

 
 
 

কিছুদিন এভাবেই চলার পর খোঁজ পড়ল প্রদর্শন মঞ্চের, প্রায় একবছর ধরে যা শেখা হলো তার প্রদর্শন তো

 

জরুরী। থিয়েটারের কারিগুরি প্রদর্শনের সবরকম সুবিধাযুক্ত একমাত্র হল শিলিগুড়িতে শুধু একটি, দীনবন্ধু

 

মঞ্চ। কিন্তু তাতে কষ্ট করে একবার না হয় প্রযোজনা উপস্থাপন করা যায়, কিন্তু বারবার তো নয়। অতএব বিকল্প

 

স্পেস।

 
 
 

বিকল্প থিয়েটার স্পেসের সন্ধানেই খুঁজে পাওয়া গেল শিলিগুড়ি নীলনলিনী বিদ্যামন্দিরের মঞ্চ, উদয়ন স্পোর্টস্

 

লাইব্রেরির মতো জায়গা। এছাড়াও শিলিগুড়ি সুভাষপল্লীতে ভিবজিওর ক্লাব, মহাবীরস্থানের আনন্দময়ী

 
 
 

কালীবাড়ির নাটমন্দির, দীনবন্ধু মঞ্চের ঠিক নীচে রামকিঙ্কর প্রদর্শনীকক্ষ ইত্যাদি কিছু স্থায়ী বিকল্প থিয়েটার

 

স্পেস। তবে থিয়েটার চর্চায় একটু একটু করে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকা এবং স্থায়ী পরিসরগুলি নিয়মিত

 

সহজলভ্য না হওয়ায় জন্য আরও বেশি বেশি বিকল্প খোঁজা শুরু হলো।

 
 
 

এর পাশাপাশি থিয়েটারের আপাত পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠলো বেশ কিছু অসরকারি সংগঠন, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে

 

নিজেদের প্রকল্পের কাজের অঙ্গ হিসেবে বন্ধুত্ব করলেন থিয়েটারের সঙ্গে। এর সঙ্গে সঙ্গে কিছু সরকারি দপ্তর,

 

বিশেষ করে যাঁরা সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিষেবা দেওয়ার সম্পর্কে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত, তাঁরা

 

গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভরসা করতে লাগলেন থিয়েটারকে। এতে যেমন থিয়েটারের পৃষ্ঠপোষক গোষ্ঠীর সংখ্যা

 

সামান্য বাড়লো, তার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে থিয়েটার করবার তাগিদে পরিসরও বৃদ্ধি পেতে

 

থাকলো।

 
 
 

গত কয়েক দশক ধরে থিয়েটার বিনোদনের অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে টিকে রয়েছে কি না, এ নিয়ে বিস্তর

 

মতপার্থক্য আছে। মতপার্থক্য এ নিয়েও আছে যে থিয়েটারের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও ডিগ্রি থিয়েটারকে পেশা

 

হিসেবে গ্রহণের কতটা সুযোগ করে দেয় বা আদৌ তা সম্ভব কি না। কিন্তু থিয়েটার কিন্তু তাই বলে কখনোই মরে

 

যায় নি। টিম টিম করে জ্বলতে জ্বলতে অনেক সময়ই তা হ্যালোজেনের আলোকেও হার মানিয়েছে। অনেক

 

অনেক মানুষ যারা শুধু থিয়েটারকে ভালোবেসেই থিয়েটারের সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছেন বিকল্প রুটি রুজির সন্ধান

 

করে। শিলিগুড়িতেও এমন মানুষ বিরল নন। বিশেষ করে শেষ দশ বছরে শিলিগুড়িতে এমন বেশ কিছু উদ্যোগ

 

চোখে পড়েছে যেখানে বিভিন্ন নাট্যদল নিজেদের মহড়াকক্ষ, অনুষ্ঠান ভবন, বিদ্যালয়ের সাইকেল স্ট্যান্ড এবং

 

সরকার পোষিত বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্নভোজন প্রকল্পের স্থানটিকে থিয়েটারের বিকল্প স্পেস হিসেবে ব্যবহার করতে

 

শুরু করেছেন।

 
 
 

আমার থিয়েটার যাত্রায় এই বিকল্প পরিসর, বিকল্প পৃষ্ঠপোষকদের ভূমিকা অপরিসীম। কেননা অর্থের

 

সংকুলানকে যদি থিয়েটারের কাজে বাধা হিসেবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে হয়, তাহলে হয়তো এই ভাবনার কোনো

 

বিকল্প নেই।

 
 
 

এর পাশাপাশি থিয়েটারের এইসমস্ত অনুষঙ্গ সহকারে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আরও একটি বড়ো সুবিধে এই যে

 

নতুন নতুন মানুষের কাছে, নতুন নতুন দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে থিয়েটার। একটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া

 

প্রয়োজন যে, স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, সোস্যাল নেটওয়ার্ক ইত্যাদি মাধ্যমকে ব্যবহার করে যে বিনোদন

 

মানুষ পেতে পারে, তার জন্য কিন্তু তাদের কোথাও পৌছে যেতে হয় না, বিনোদন তাদের কাছে পৌছে যায়। আমরা

 

থিয়েটার কর্মীরা যখন থিয়েটারকে নিয়ে এভাবে জনতার দরবারে পৌছে যাচ্ছি তখন কিন্তু শিক্ষার প্রথম প্রজন্মের

 

মতো থিয়েটার দর্শকেরও প্রথম প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে।

 
 
 

আপাতত এইভাবেই চলবে নিশ্চয়ই কিছুদিন বা অনেকদিন। অন্তত যতদিন প্রচলিত সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে

 

থিয়েটার মিশে না যাচ্ছে। মফঃস্বলের থিয়েটার চর্চার বিকল্প মাধ্যমের এই সংস্করণের জয়জয়কার হোক্।

 
 

বিকল্প স্পেসে থিয়েটার প্রসঙ্গে অভি চক্রবর্তী

 
 
 
 
 

অন্যস্পেস বা বিকল্প স্পেস নিয়ে ইদানিং যে সবিশেষ উদ্যোগ এবং আয়োজন বাংলা থিয়েটারে দেখা যাচ্ছে সেটা

 

নতুন কোনো ঘটনা নয়। বাংলা থিয়েটারের মৌলিক চিন্তানায়ক রবীন্দ্রনাথ এর নাট্যচর্চা ও চর্যাতে আমরা এই

 

ইশারা ও আয়োজন যুগপৎ প্রত্যক্ষ করতে পারি।

 

এখন প্রশ্ন হয় যে এই চর্চাকে নব্য বা অভিনব ব্যতিক্রমী বা আমি সেই মহান পরাক্রমশালী যে কিনা প্রথম

 

ইহা করিলাম এসব না ভেবে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সার্থক মিলমিশ ঘটিয়ে নতুন থিয়েটারের ভাষা নির্মাণ

 

করা যায় কিনা তাই খুঁজে দেখতে হবে আমাদের।

 
 
 

পুনশ্চঃ – ডিম মোমবাতি আলতা খোলামেলা যৌনতা বা তার অনুষঙ্গ ব্যাতীতও বিকল্প স্পেসে নাট্যচর্চা হতে

 

পারে তার প্রমাণ বাদল সরকার সম্পাদিত পথসেনার রক্তকরবী বা এই বছর বিকল্প স্পেসে হওয়া ইফটা' র

 

ক্যানভাস, থিয়েলাইট এর শয়তান এবং মন্থন এর মোকাম্মেলের অমিতাভ ।

 
 
*******************OUR TEAM BEHIND MAGAZINE************************

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *